(৩)
যিনি বিপুলকীর্ত্তিকলাপে সসাগরা বসুন্ধরাকে বিভূষিত করিয়াছিলেন, অরাতি-নিধনকারী, [সর্ব্বকার্য্যে] কুশল, প্রশংসনীয়, সেই বপ্যট [দয়িতবিষ্ণু হইতে] জন্ম গ্রহণ করিয়াছিলেন।
(৪)
[দুর্ব্বলের প্রতি সবলের অত্যাচারমূলক] “মাৎস্য ন্যায়”[১] [অরাজকতা] দূর করিবার অভিপ্রায়ে, প্রকৃতিপুঞ্জ যাঁহাকে রাজলক্ষ্মীর কর গ্রহণ করাইয়া [রাজা নির্ব্বাচিত করিয়া] দিয়াছিল, পূর্ণিমা-রজনীর [দিঙ্মণ্ডল-প্রধাবিত] জ্যোৎস্নারাশির অতিমাত্র ধবলতাই যাঁহার স্থায়ী যশোরাশির অনুকরণ করিতে পারিত, নরপাল-কুলচূড়ামণি গোপাল নামক সেই প্রসিদ্ধ রাজা বপ্যট হইতে জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন।
(৫)
চন্দ্রের যেমন রোহিণী, অগ্নির যেমন স্বাহা, শিবের যেমন সর্ব্বাণী, গুহ্যকপতি কুবেরের যেমন
- ↑ ‘মাৎস্য ন্যায়’ সংস্কৃত সাহিত্যে সুপরিচিত একটি লৌকিক ন্যায়। তাহার অর্থ,—দুর্ব্বলের প্রতি সবলের অত্যাচারজনিত অরাজকতা। উদাসীন শ্রীরঘুনাথবর্ম্ম বিরচিত “লৌকিক ন্যায়সংগ্রহ” গ্রন্থে “মাৎস্য ন্যায়” এইরূপে ব্যাখ্যাত হইয়াছে। যথা—
“प्रबल-निर्बल विरोधे सबलेन निर्बल-बाधविवक्षायां तु मात्स्यन्यायावतारः। अयं प्रायः इतिहास-पुराणादिषु दृश्यते, यथाहि वासिष्टे प्रह्लादाख्याने तत्समाधिं प्रस्तुत्योक्त्रम्,—एतावताथ कालेन तद्रसातल-मण्डलं।
बभूवाराजकं तीक्ष्णं मात्स्यन्याय-कदर्थितम्॥
यथा—प्रबला मत्स्या निर्ब्बलां स्तान्नाशयन्तिस्मेति न्यायार्थः।”অধ্যাপক বোধলিঙ্গ একটি কারিকা উদ্ধৃত করিয়া দেখাইয়াছেন যথা—
“परस्परामिषतया जगतो भिन्नवर्त्मनः।
दण्डाभावे परिध्वंसी मात्स्यो न्यायः प्रवर्त्तते॥”
—Von Bohtlingk’s Inde Spruche.বঙ্গদেশে এক সময়ে এইরূপ ‘মাৎস্য ন্যায়’ প্রবর্ত্তিত হইলে, প্রজাপুঞ্জ তাহা দূরীভূত করিয়া, গোপালদেবকে রাজা নির্ব্বাচিত করিয়াছিল। গোপালদেবের পুত্র ধর্ম্মপালদেবের তাম্রশাসনের এই বিবরণটি তারানাথের গ্রন্থেও উল্লিখিত আছে। ইহা বাঙ্গালার ইতিহাসের একটি স্মরণীয় ঘটনা। ‘মাৎস্য ন্যায়ের’ ব্যাখ্যা করিতে গিয়া, “রামচরিতের” ভূমিকায় মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিতবর শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এম্ এ লিখিয়াছেন—“to escape from being absorbed into another kingdom or to avoid being swallowed up like a fish.”
বিষ্ণুপুরাণোক্ত এই অষ্টাদশবিদ্যা সূচিত করিবার জন্যই “সর্ব্ববিদ্যাবদাত” বিশেষণটি প্রযুক্ত হইয়া থাকিতে পারে। “সর্ব্ববিদ্যার” মধ্যে “ধনুর্বিদ্যা” অবশ্যই অন্তর্নিবিষ্ট থাকিবে। সুতরাং দয়িতবিষ্ণুর তাহাতেও অধিকার থাকা বুঝিতে হইবে। কিন্তু “রামচরিতের” ভূমিকায় মহামহোপাধ্যায় শ্রীযুক্ত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এম-এ দয়িতবিষ্ণু সম্বন্ধে লিখিয়াছেন—He was not even a military man. এরূপ সিদ্ধান্ত করিবার কারণ কি, তাহা উল্লিখিত হয় নাই। পক্ষান্তরে সর্ব্ববিদ্যার উল্লেখ থাকায়, তাহা হইতে ধনুর্বিদ্যাকে বর্জ্জন করিবার কারণ দেখিতে পাওয়া যায় না।
১৯