পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/২৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

লেখমালা।

ভদ্রকন্যা[] ভদ্রা, ইন্দ্রের যেমন পুলোমজা, এবং বিষ্ণুর যেমন লক্ষ্মী, সেইরূপ সেই [গোপালদেব] রাজার দেদ্দদেবী নাম্নী চিত্তবিনোদনকারিণী প্রিয়তমা মহিষী ছিলেন।

(৬)

 সেই গোপালদেব এবং দেদ্দদেবী হইতে ধর্ম্মপালদেব জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার বিশুদ্ধ ক্রিয়াকলাপ [অবদান] সুজন কর্ত্তৃক প্রশংসিত [স্তূয়মান]।[] নৃপতিবৃন্দের অধীশ্বর সেই রাজা একাকী সমগ্র বসুমতীর শাসনকার্য্য পরিচালনা করিতেছেন। ভুবনমণ্ডলের পরিখা স্বরূপ দিঙ্মণ্ডলের বিজয়াভিলাষী সেই রাজার [যুদ্ধ] যাত্রাকালে তীর হইতে জলনিমজ্জনোন্মত্ত-করিচরণ-সংস্পর্শে সমুদ্রের চিহ্ন বিলুপ্ত হওয়ায়, চতুঃসমুদ্র সে বিজয়যাত্রার বেগ সহ্য করিতে পারে না।

(৭)

 সেই রাজা [ধর্ম্মপাল] প্রকট-লীলাচলিত-সেনাবল-সমভিব্যাহারে দিগ্বিজয়ার্থ বহির্গত হইলে, সেনাভারাক্রান্ত বিচলিত পর্ব্বতমালা বক্রভাব প্রাপ্ত হয়; এবং তাহাতে মস্তকস্থিত নম্রীকৃত মণিদ্বারা মস্তকে বেদনা অনুভব করিয়া, সেই বেদনাক্রান্ত শিরঃসমূহের সাহায্যার্থে হস্তোদ্গম করিয়া, অনন্তদেব অধোদেশে [সেই রাজার] অনতিদূরবর্ত্তিরূপে ত্বরিতপদে অনুগমন করিয়া থাকেন।

(৮)

 সেই রাজা যুদ্ধার্থ প্রস্থিত হইলে, প্রচলিত সেনাসমূহের আস্ফালনোত্থিত ধূলিপটলে আকাশমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হইবার জন্য, পৃথিবী সূক্ষ্মভাব ধারণ করিলে, ভারের লাঘববশতঃ, মণিগুলি উন্মীলিত হইলে, অনন্তদেবের ফণাসকল উল্লসিত হইয়া থাকে।

(৯)

 কেহ তাঁহার চিত্তকে অপ্রিয় আচরণের দ্বারা বিচলিত করিলে, যে কোপাগ্নি সমুদ্ভূত হয়, তাহা বাড়বাগ্নির ন্যায় চতুঃসাগর-বেষ্টিত ভূমণ্ডলে নিরন্তর [অনির্বৃতি] প্রজ্জ্বলিত হইয়া থাকে।

(১০)

 পৃথু, রঘুবংশধর রামচন্দ্র,[] নল প্রভৃতি যে সকল [গুণাধার] নরপালগণ [ভিন্ন ভিন্ন সময়ে]

  1. অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ দেদ্দদেবীকে ভদ্র নামক এক রাজার কন্যা বলিয়া নির্দ্দেশ করিয়াছেন। তিনি তাহার কোনরূপ প্রমাণের উল্লেখ করেন নাই। এখানে কোন ঐতিহাসিক তথ্য প্রকটিত হইয়াছে বলিয়া বোধ হয় না, এখানে কেবল পৌরাণিক আখ্যায়িকাই সূচিত হইয়াছে।
  2. পুরাতন বঙ্গলিপির ‘যকার’ এবং ‘পকার’ দেখিতে একরূপ বলিয়াই, অর্থসঙ্গতির প্রতি লক্ষ্য না করিয়া, কেহ কেহ স্তূয়মানকে ‘স্তূপমান’ পাঠ করিয়া থাকিবেন।
  3. কেবল ‘রাম’ বলিলে পুরাণপ্রসিদ্ধ তিন ব্যক্তি সূচিত হইতে পারেন বলিয়া, এখানে রাম-শব্দের সঙ্গে ‘রাঘব’ শব্দটি ব্যবহৃত হইয়াছে।

২০