পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৩১

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ধর্ম্মপালদেবের তাম্রশাসন।

নিহিত শৈলশিখরশ্রেণীরূপে [লোকের মনে] বিভ্রমের উৎপাদন করিয়া থাকে,—যেখানে নিরতিশয় ঘনসন্নিবিষ্ট [ঘনাঘন-নামক[১]] রণকুঞ্জর-নিকর [জলদজালবৎ প্রতিভাত হইয়া] দিনশোভাকে শ্যামায়মান করিয়া, [লোকের মনে] নিরবচ্ছিন্ন জলদসময়-সমাগম-সন্দেহের উৎপাদন করিয়া থাকে,—যেখানে উত্তরাঞ্চলাগত অগণ্য [মিত্র] রাজন্য-কর্ত্তৃক [প্রাভৃতীকৃত[২]] উপঢৌকনীকৃত অসংখ্য অশ্বসেনার  প্রখর-খুরোৎক্ষিপ্ত-

    to say that the broad line of boats floating on the river resembled the famous bridge of Ráma. অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ “নৌবাটক”-শব্দকে বিজয়সেনদেবের [দেওপাড়ায় আবিষ্কৃত] প্রস্তরলিপির [২২ শ্লোকের] “নৌ-বিতান”-শব্দের তুল্যার্থ-বোধক মনে করিয়া, [Epigraphia Indica, Vol. IV., p. 252] “নৌ-সেতু”—অর্থ গ্রহণ করিতে অসমর্থ হইয়া, লিখিয়া গিয়াছেন,—“where the manifold fleets of boats, proceeding on the path of the Bhágirathi, make it seem as if a series of mountain-tops had been sunk to build another (?) causeway (for Ráma’s passage)” আদ্যন্তের সমালোচনা করিলে, “নৌ-সেতু” অর্থ গ্রহণ করিবার আকাঙ্ক্ষা উপস্থিত হয় না। “বাট” বা “বাটক” শব্দ “অমরকোষে” স্থান প্রাপ্ত হয় নাই। “বাট”-শব্দ [পুরুষোত্তমদেব-কৃত] “ত্রিকাণ্ড শেষে” এবং [হেমচন্দ্র-কৃত] “অভিধান-চিন্তামণিতে” যথাক্রমে

    “वाटः पथश्च मार्गश्च,”
    এবং
    “वाटः पथि वृतौ वादं,”

    বলিয়া উল্লিখিত থাকিলেও, “নৌবাটক”-শব্দকে “নৌপথ” বলিয়া ব্যাখ্যা করা যায় না। বাঙ্গালীর “নৌবল” চিরপরিচিত। মহাকবি কালিদাস বাঙ্গালীকে “নৌসাধনোদ্যতান্” বলিয়া তাহার পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন। পালবংশীয় নরপালগণ বাঙ্গালী বলিয়া, তাঁহাদের “জয়স্কন্ধাবারে” হস্ত্যশ্বপদাতিবলের ন্যায় “নৌবলও” দেখিতে পাওয়া যাইত; এবং রাজ-কবি তজ্জন্যই “নৌবাটক”-শব্দের ব্যবহারে তাহার পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন। ইহাই যে “নৌবাটক”-শব্দের প্রকৃত অর্থ, সৌভাগ্যক্রমে বৈদ্যদেবের [কমৌলিগ্রামে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [একাদশ শ্লোকে] উল্লিখিত [নৌযুদ্ধ-বর্ণনায় ব্যবহৃত] “नौवाट हीहीरव” তাহার পরিচয় প্রদান করিতেছে। নৌবাট, নৌবিতান প্রভৃতি শব্দ যে নৌবাহিনীর প্রতিশব্দরূপে ব্যবহৃত হইত, তাহা এইরূপে বুঝিতে পারা যায়। মুসলমান-শাসন-সময়ে এই “নৌবাট” “নওয়ারা”-নামে পরিচিত হইয়াছিল। “নওয়ারা”-শব্দ এখনও অপ্রচলিত হয় নাই; কিন্তু তৎপূর্ব্ববর্ত্তী “নৌবাট”-শব্দ একেবারে অপ্রচলিত হইয়া পড়িয়াছে!

  1. “ঘনাঘন”-শব্দে এক শ্রেণীর হস্তী সূচিত হইয়াছে। সেকালে এক শ্রেণীর রণদুর্ম্মদ ঘাতুক মত্ত হস্তী প্রতিপালিত হইত; তাহাই “ঘনাঘন”-নামে সুপরিচিত ছিল। ধরণি-কোষে তাহা

    “आन्योन्यघट्टने चैव घातुके च घनाघनः”

    বলিয়া উল্লিখিত আছে। অমর-কোষের নানার্থবর্গেও [৩।৩।১২০] সেই অর্থ সূচিত হইয়াছে। এই “ঘনাঘন”-নামক হস্তীর ব্যূহকে “ঘটা” বলিত। অমর-কোষে [২।৮।১০৭]

    “करिणां घटनं घटा”

    বলিয়া তাহা উল্লিখিত আছে। সেই অর্থে কথাসরিৎসাগরে [১৯।১০৯] “গজেন্দ্র-ঘটা” ব্যবহৃত হইয়াছে। “ঘনাঘন-ঘটা,” ঘনঘটার ন্যায় প্রতিভাত হইয়া, জয়স্কন্ধাবারের দিনশোভাকে শ্যামায়মান করিয়া রাখিত বলিয়া, লোকের মনে বর্ষাসমাগমের সন্দেহ উপস্থিত হইত।

  2.  অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ এবং বটব্যাল-ধৃত এই তাম্রশাসনের “প্রভৃতীকৃত” শব্দ লিপিকর প্রমাদের নিদর্শন। প্রকৃত পাঠ—“প্রাভৃতীকৃত”। তাহার অর্থ—“উপঢৌকনরূপে উপহৃত”। অমরকোষে [২।৮।২৭] “প্রাভৃত”-শব্দ

    “प्राभृतं तु प्रदर्शनं”

    বলিয়া উল্লিখিত আছে। দেবতাকে বা মিত্ররাজাকে যাহা উপহাররূপে প্রদান করা যায়, তাহারই নাম

২৩