পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৩২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

লেখমালা।

ধূলিপটল-সমাবেশে দিঙ্মণ্ডলের অন্তরাল নিরন্তর ধূসরিত হইয়া থাকে,—যেখানে রাজরাজেশ্বর-সেবার্থ-সমাগত সমস্ত জম্বূদ্বীপাধিপতিগণের অনন্ত-পদাতি-পদভরে[১] বসুন্ধরা অবনত হইয়া থাকে,—সেই পাটলিপুত্রনগর-সমাবাসিত-শ্রীমজ্জয়স্কন্ধাবার হইতে, পরম সুগত-[বুদ্ধ]-মতাবলম্বী মহারাজাধিরাজ শ্রীগোপালদেবের পাদানুধ্যান-পরায়ণ, পরমেশ্বর পরমভট্টারক[২] মহারাজাধিরাজ কুশলী[৩] শ্রীমান্ ধর্ম্মপালদেব শ্রীপুণ্ড্রবর্দ্ধন-“ভুক্তির” অন্তঃপাতি, ব্যাঘ্রতটী-“মণ্ডলের” অন্তর্ভুক্ত, মহন্তাপ্রকাশ নামক “বিষয়ের”[৪] অন্তর্গত ক্রৌঞ্চশ্বভ্র নামক গ্রাম।[৫] ইহার  সীমা,—

    “प्राभ्रतं” বলিয়া ভানুজীদীক্ষিত-কৃত অমর-টীকায় ব্যাখ্যা দেখিতে পাওয়া যায়। উত্তরাঞ্চলের রাজন্যগণ পালবংশীয় নরপালগণকে উপঢৌকনরূপে হয়-বাহিনী “প্রাভৃতীকৃত” করিতেন; রাজকবি রচনাকৌশলে এই ঐতিহাসিক তথ্যের সন্ধান প্রদান করিয়া গিয়াছেন,—সুতরাং তৎকালে উত্তরাঞ্চলের রাজন্যবর্গ পালবংশীয় নরপালগণের মিত্র-রাজন্য মধ্যে পরিগণিত হইতেন বলিয়াই বুঝিতে হইবে।

  1. “पादात-भर-नमदवनेः” পাঠটি মদনপালদেবের [মনহলিগ্রামে-আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [৩০ পংক্তিতে] “पादाभर नमदवनेः” রূপে উৎকীর্ণ আছে, এবং সাহিত্যপরিষৎ-পত্রিকায় “পাদভর নমদবনেঃ” রূপে মুদ্রিত হইয়াছে। উহা লিপিকর-প্রমাদ বলিয়াই বোধ হয়। সাহিত্য-পরিষৎ-পত্রিকায় মুদ্রিত “ভূপালগণের অনন্ত পাদভরে” সঙ্গত ব্যাখ্যা বলিয়া স্বীকৃত হইতে পারে না। কারণ ভূপালগণ, পদব্রজে গমনাগমন করিতেন না। “পাদাত”-শব্দের অর্থ অমরকোষে [২।৮।৬৭] এইরূপ লিখিত আছে,—

    “अथ पादातं पत्तिसंहतिः,”

    তাহার অর্থ “पदातीनां समूहः” বলিয়া, ভানুজীদীক্ষিত-কৃত টীকায় উল্লিখিত আছে। এই অর্থ প্রকটিত করিবার জন্য “पादात” শব্দই ব্যবহৃত হইয়াছিল। অতি পুরাকালে “हस्त्यश्वरथपादातं” লইয়া চতুরঙ্গ সেনা গঠিত হইত। কালক্রমে রথের ব্যবহার উঠিয়া গেলে, হস্তী অশ্ব ও পদাতি মাত্রই প্রচলিত ছিল। এখানে সেই সকল সেনাঙ্গের কথাই উল্লিখিত হইয়াছে। ভাগীরথীপ্রবাহ-প্রবর্ত্তমান “নৌবাট”-সমূহ এবং “ঘনাঘন”-নামক মদমত্ত হস্তিব্যূহ রাজাধিরাজের প্রবল প্রতাপ সূচিত করিত; উ্তরাঞ্চলের প্রসিদ্ধ অশ্ব তদ্দেশের মিত্ররাজকর্ত্তৃক উপঢৌকনরূপে প্রেরিত হইয়া, তত্তদ্দেশে রাজাধিরাজের আধিপত্যের পরিচয় প্রদান করিত; এবং যাহারা [দরবার উপলক্ষে] রাজধানীতে সমাগত হইতেন, সেই সকল সামন্তরাজ অসংখ্য পদাতিসেনা-সমভিব্যাহারে সম্মিলিত হইয়া, রাজধানীর গৌরব বর্দ্ধন করিতেন। রাজকবি রচনা-কৌশলে এই সকল ঐতিহাসিক তথ্যের উল্লেখ করিয়া, রাজাধিরাজের রাজধানীর একটি অত্যুজ্জ্বল দৃশ্যপট উদ্ঘাটিত করিয়া গিয়াছেন। এই বর্ণনা কেবল পালবংশীয় নরপালগণের তাম্রশাসনেই দেখিতে পাওয়া যায়।

  2. “राजा भट्टारको देवः” বলিয়া অমরকোষে [১।৩।১৩] উল্লিখিত আছে।
  3. “कुशली श्रीमान् धर्म्मपालदेवः” কর্ত্তৃপদ। ৪৮ পংক্তিতে উল্লিখিত “मानयति बोधयति समाज्ञापयति च” ইহার ক্রিয়াপদ। অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ এবং ডাক্তার হুল্‌জ্, উভয়েই “কুশলী”-শব্দের “স্বাস্থ্য-সম্পন্ন”-অর্থ গ্রহণ করিয়া, “being in good health” বলিয়া, তাহার ইংরাজি অনুবাদ লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন। বটব্যাল মহাশয় ইহাকে Prosperous বলিয়া গিয়াছেন।
  4. এখানে “বিষয়” নামক বিভাগ “মণ্ডল” নামক বিভাগের অন্তর্গত, এবং “মণ্ডল” নামক বিভাগ “ভুক্তি” নামক বিভাগের অন্তর্গত বলিয়া উল্লিখিত। পাল-সাম্রাজ্য নানা “ভুক্তিতে” বিভক্ত ছিল। তন্মধ্যে দেবপালদেবের [মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে (৩০ পংক্তিতে) “শ্রীনগর-ভুক্তির”; নারায়ণপালদেবের [ভাগলপুরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [২৯ পংক্তিতে] তীরভুক্তির, এবং অন্যান্য পাল-নরপালের তাম্রশাসনে “শ্রীপুণ্ড্রবর্দ্ধন-ভুক্তি” নামে আর একটি “ভুক্তির” পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে। এই তাম্রশাসনোক্ত “শ্রীপুণ্ড্রবর্দ্ধন”-ভুক্তির” অন্তর্গত “মণ্ডল”সমূহের মধ্যে ব্যাঘ্রতটী-নামক একটি “মণ্ডল” ছিল, তদন্তর্গত “বিষয়”-সমূহের মধ্যে মহন্তাপ্রকাশ নামক একটি “বিষয়” ছিল, ক্রৌঞ্চশ্বভ্র গ্রাম সেই “বিষয়ের” অন্তর্গত ছিল।
  5.  এই সকল স্থানের মধ্যে “শ্রীপুণ্ড্রবর্দ্ধন-ভুক্তির” নাম “বরেন্দ্র” বলিয়া সুপরিচিত হইলেও, অনেক সময়ে

২৪