লেখমালা।
এই প্রস্তর-ফলকে ৯ পংক্তিতে [সংস্কৃত ভাষা-নিবদ্ধ] চতুঃশ্লোকাত্মক একটি সংক্ষিপ্ত লিপি উৎকীর্ণ রহিয়াছে। তাহার দুই একটি অক্ষর অস্পষ্ট হইলেও, অধিকাংশ অক্ষর এখনও অক্ষুণ্ণলিপি-পরিচয়। অবস্থায় বর্ত্তমান আছে। প্রস্তর-ফলকের দক্ষিণভাগে যে তিনটি প্রকোষ্ঠ আছে, তাহার বাম প্রকোষ্ঠে বিষ্ণুমূর্ত্তি, দক্ষিণ প্রকোষ্ঠে সূর্য্যমূর্ত্তি; এবং মধ্যস্থলের প্রকোষ্ঠে আর একটি [অস্পষ্ট] শ্রীমূর্ত্তি; তাহা [চক্রবর্ত্তী মহাশয়ের মতে] “হয়ত ভৈরব মূর্ত্তি।”[১] যে অক্ষরে এই লিপি উৎকীর্ণ হইয়াছিল, তাহা ধর্ম্মপালদেবের শাসন-সময়ের বঙ্গাক্ষর; ধর্ম্মপালদেবের [খালিমপুরে আবিষ্কৃত] তাম্ৰশাসনের অক্ষরের অনুরূপ।
এই প্রস্তর-লিপিতে লিখিত আছে,—ধর্ম্মপালের রাজ্যাব্দের ষড়্বিংশতিতম বর্ষে [৭ পংক্তি] ভাদ্রমাসের কৃষ্ণা পঞ্চমী তিথিতে শণিবারে [৮-৯ পংক্তি] উজ্জ্বল নামক ভাস্করের পুত্র কেশব-[১-২ পংক্তি]লিপি-বিবরণ। কর্ত্তৃক একটি চতুর্ম্মুখ মহাদেব [৩ পংক্তি] প্রতিষ্ঠাপিত হইয়াছিল, এবং [তৎকাল-প্রচলিত “দ্রম্ম” নামক মুদ্রার] তিন সহস্ৰ মুদ্রা ব্যয়ে [৬ পংক্তি] একটি “অতি অগাধা” পুষ্করিণী খানিত হইয়াছিল। এই প্রস্তর-লিপিতে কবির বা শিল্পীর নাম উল্লিখিত নাই; ইহাতে কোনরূপ উল্লেখযোগ্য শিল্প-কোঁশলেরও সমাবেশ দেখিতে পাওয়া যায় না।
যে “রম্য” স্থানে এই প্রতিষ্ঠাকার্য্য সম্পাদিত হইয়াছিল, প্রস্তর-ফলকটি সেই স্থানের ধ্বংসাবশেষের মধ্যেই আবিষ্কৃত হইয়াছে। তাহা বুদ্ধগয়াধামের “চম্পশায়তন” নামে [১ পংক্তিতে] উল্লিখিত। এই নামটি সংশয়হীন বলিয়া বোধ হয় না। যাহা হউক,—এই শিলালিপিতেঐতিহাসিক তথ্য। জগদ্বিখ্যাত মহাবোধি নামক বৌদ্ধ-তীর্থক্ষেত্রে শৈব-মূর্ত্তিপ্রতিষ্ঠার যে পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া গিয়াছে, তাহা একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক তথ্য। ধর্ম্মপালদেবের শাসন-নীতির সকল বর্ণকেই [শাস্ত্রনির্দ্দিষ্ট] স্ব স্ব “স্বধর্ম্মে” প্রতিষ্ঠাপিত করিবার কথা তৎপুত্র দেবপালদেবের [মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত] তাম্ৰশাসনে [৫ শ্লোকে] উল্লিখিত আছে। ধর্ম্মপালদেবের শাসন-সময়ে মহাবোধি নামক বৌদ্ধতীর্থক্ষেত্রে এই শৈব-মূর্ত্তির প্রতিষ্ঠা তাহার একটি প্রকৃষ্ট প্রমাণ বলিয়া স্বীকৃত হইতে পারে। এই প্রস্তর-লিপিতে “দ্রম্ম” নামক যে মুদ্রার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহা যে এক শ্রেণীর রৌপ্য-মুদ্রা ছিল, বিগ্রহপালদেবের শাসন সময়ের “দ্রম্ম” নামক রৌপ্যমুদ্রা আবিষ্কৃত হইয়া, তাহার পরিচয় প্রদান করিয়াছে।[২] ধর্ম্মপালদেবের শাসন-সময়েও “দ্রম্ম” প্রচলিত ছিল,—এই প্রস্তরলিপিই তাহার প্রমাণ। “দ্রম্ম”-শব্দ অমরকোষে দেখিতে পাওয়া যায় না; কিন্তু সংস্কৃত সাহিত্যে এই শব্দ
৩০