পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
দেবপালদেবের তাম্রশাসন।

ভবনে গমন করিবার জন্য অনুজ্ঞা-প্রচার করিলে, ভূপালবৃন্দ স্ব স্ব রাজ্য [পুনঃ] প্রাপ্ত হইয়া, যে সময়ে [রাজাধিরাজের] সমুচিত কার্য্যকলাপের চিন্তা করিতেন, তখন তাঁহাদের হৃদয়, পুণ্যক্ষয়ে স্বৰ্গনষ্ট জাতিস্মর মানবের হৃদয়ের ন্যায়, প্রীতিভরে উৎকণ্ঠিত হইয়া উঠিত।[১]

(৯)

 গার্হস্থ্য-ধর্ম্মাবলম্বী সেই নরপাল রাষ্ট্ৰকূটরাজ্য-ভূষণ শ্রীপরবল নামক নরপালের কন্যা রণ্ণাদেবীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন।

(১০)

 সেই রাজ্ঞী স্বভাবগম্ভীর গুণরাশির আতিশয্যে অন্তঃপুরকে [অন্তঃপুরবাসি-মহিলাবৃন্দকে] পরাজিত করিয়াছিলেন। সেই পবিত্রাচারসম্পন্না রাজ্ঞী তাঁহার প্রজাবর্গের মনে বিতর্কের আবির্ভাব করাইয়াছিলেন বলিয়া তাহারা মনে করিত,—ইনি মূর্ত্তিমতী লক্ষ্মী, অথবা শরীরধারিণী পৃথিবী দেবী, অথবা [রাজার] মূর্ত্তিমতী কীর্ত্তি, অথবা রাজগৃহের অধিষ্ঠাত্রী দেবতা।

(১১)

 সমুদ্রের শুক্তি যেমন মুক্তারত্ন প্রসব কবিয়া থাকে, সেইরূপ প্রশংসনীয়া পতিব্রতা সেই রণ্ণাদেবীও প্রসন্নবদন দেবপালদেবকে প্রসব করিয়াছিলেন।

(১২)

 নির্ম্মলচেতা সংযতবাক্ পবিত্র-কায়-কর্ম্ম-নিরত বোধিসত্ব যেমন নিরুপদ্রব বুদ্ধপদ লাভ করেন, নির্ম্মলচেতা সংযতবাক্ পবিত্র-কায়-কর্ম্ম-নিরত দেবপালদেবও সেইরূপ নিরুপদ্রব পিতৃরাজ্য প্রাপ্ত হইয়াছিলেন।[২]

(১৩)

 অপর [প্রতিকূলতাচরণপরায়ণ] নৃপতিবৃন্দের গর্ব্বখর্ব্বকারক সেই রাজার দিগ্বিজয়-প্রসঙ্গে

  1. এই শ্লোকে রাজকবি কৌশলক্রমে ধর্ম্মপালের রাজনীতি কিরূপ ছিল, তাহারই পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন।
  2. ধর্ম্মপালের সুদীর্ঘ শাসনকালে তাঁহার বিপুল সাম্ৰাজ্য সকল সময়ে সম্যক্ নিরুপদ্রব ছিল বলিয়া প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায় না। এই শ্লোকের বর্ণনা পাঠ করিলে মনে হয়, তাঁহার দেহাবসান-সময়ে রাজ্যমধ্যে কোনরূপ উপদ্রব বর্ত্তমান ছিল না। সিংহাসনে আরোহণ করিবার পর, দেবপালদেবকেও অনেক যুদ্ধ কলহে লিপ্ত হইতে হইয়াছিল। তাহার কথা এই তাম্রশাসনে এবং ভট্টগুরবের গরুড়স্তম্ভ-লিপিতে উল্লিখিত আছে। সুতরাং এই শ্লোকে কেবল সিংহাসনারোহণকালের কথাই বিবৃত হইয়াছে বলিয়া বুঝিতে হইবে।

৪৩