পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বীরদেব-প্রশস্তি।

(১২)

 তিনি ধন্বন্তরীর প্রভাব প্রতিহত করিয়া, দৃষ্টিপাতমাত্রে, আর্ত্তজনের চিন্তাজ্বর প্রশমিত করিয়া থাকেন। [তাঁহার নিকটে আসিলে] সকল মনোরথ পূর্ণ হইয়া যায় বলিয়া, লোকে তাঁহাকে কল্পতরুতুল্য বলিয়াই মনে করিয়া থাকে।

(১৩)

 তিনি এখানে, “বজ্রাসনের” জন্য, আত্ম-মনের ন্যায় সমুন্নত ভুবনোত্তম [এমন] একটি মন্দির নির্ম্মাণ করিয়া দিয়াছেন [যে] তাহার প্রতি দৃষ্টিপাত করিলে, বিমানচারিগণের মনে কৈলাস-মন্দর-মহীধরশৃঙ্গ বলিয়া আশঙ্কা উপস্থিত হইয়া থাকে।

(১৪)

 সর্ব্বস্বের উপনয়ের[] দ্বারা [সর্ব্ব] প্রাণি-হিতার্থিগণের ঔদার্য্য এবং সম্বোধি [তত্ত্বজ্ঞান] লাভার্থ, স্পৃহনীয় গুণ ও বীর্য্য [অধ্যাত্মশক্তি] অভ্যাস করিয়া, তিনি এখানকার পুণ্যাধিকারে অবস্থিত থাকিবার সময়ে, উত্তরাপথ-সংস্থিত আপন [মাতৃ-পিতৃ] দুইটি বংশে[] নিজের যশোধ্বজ সংবদ্ধ করিয়া দিয়াছেন।

(১৫)

 মুক্তি-পুরীর সোপান-পথের ন্যায় এই কীর্ত্তি[] সংস্থাপিত হওয়ায়, ইহাতে যে পুণ্য সঞ্জাত হইল,

    করিয়া গিয়াছেন। কাপ্তান কিট্টো, এবং তাঁহার পদাঙ্কানুসরণকারী ব্রোড্‌লে সাহেব, বিহার-নগরকেই ইন্দ্রশিলা বলিয়া স্থির করিয়াছিলেন। ইহার বাদানুবাদ Cunningham’s Archeological Survey Report Vol. I, pp. 145-151 দ্রষ্টব্য।
     ডাক্তার হুল্‌জ্ একাদশ শ্লোকের ব্যাখ্যায়, “পরিহার” শব্দে “an arm-ring” কল্পনা করিয়া গিয়াছেন। পরিহার শব্দের এরূপ অর্থ যে কোনও অভিধানে দেখিতে পাওয়া যায় না, তাহার উল্লেখ করিয়াও, ডাক্তার হুল্‌জ্ কেন এরূপ অর্থ গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহা বোধগম্য হয় না। পরিহার-শব্দের সাধারণ অর্থ [অবজ্ঞা বা অনাদর বা ত্যাগ] অবশ্যই এখানে সূচিত হয় নাই।
     মনুসংহিতায় [৮।২৩৭] আরও একটি অর্থ দেখিতে পাওয়া যায়। যথা—

    “धनुः शतं परीहारो ग्रामस्य स्यात् समन्ततः॥”

     ইহার ব্যাখ্যা করিতে গিয়া কুল্লুকভট্ট লিখিয়া গিয়াছেন,—“ग्रामसमीपे सर्व्वासु दिक्षु चत्वारि हस्तशतानि त्रीन् वा यष्टिप्रक्षेपान् यावत् पशुप्रचारार्थं शस्यवपनादि-संरोध-परिहारः कार्य्यः।” এখানেও ‘পরিহার’-শব্দে এইরূপ সীমা উল্লিখিত হইয়াছে। বিহারই নালন্দার ‘পরিহার’, তাহাতেই নালন্দা ‘বিভূষিতাঙ্গী’ ছিল।

  1. “উপনয়” শব্দের সুপরিচিত অর্থ—উপনয়ন—“उप समीपे नीयते येन कर्म्मणा”। তাম্রশাসনাদিতে এই শব্দ আরও একটি অর্থে ব্যবহৃত হইবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়, তাহা “প্রদান” বলিয়া কথিত হইতে পারে। এখানে সেই অর্থই সূচিত হইয়াছে।
  2. “বংশ”-শব্দটি শ্লিষ্টার্থ-জ্ঞাপকরূপে ব্যবহৃত হইয়াছে। বংশ-দণ্ডে ধ্বজা বন্ধন করিবার রীতি আছে। এখানে “বংশ” [মাতৃপিতৃকুল] যেন বীরদেবের যশোধ্বজ বন্ধনের বংশদণ্ড—এইরূপ ভাব ধ্বনিত হইয়াছে।
  3. “কীর্ত্তি” শব্দের সাধারণ অর্থ সুপরিচিত, “दानादिप्रभवा कीर्त्तिः शौर्य्यादिप्रभवं यशः”। কিন্তু মন্দিরাদিও “কীর্ত্তি” নামে কথিত হইয়া থাকে। “কীর্ত্তি”-শব্দের এই অর্থ হেমচন্দ্রের “অভিধান-চিন্তামণিতে” দ্রষ্টব্য।

৫৩