লেখমালা।
ইন্দ্রের কনিষ্ঠ-ভ্রাতা বিষ্ণুর[১] [উপেন্দ্রের] চরিত্রের ন্যায় পবিত্র-চরিত্র-মাহাত্ম্যে পৃথিবীর পবিত্রতা সম্পাদন পূর্ব্বক, ধর্ম্মদ্বেষিগণকে[২] যুদ্ধে বশীভূত করিয়া, দেবপাল নামক [পূর্ব্বজ] জ্যেষ্ঠ সহোদরকে ভুবন-রাজ্যসুখের অধিকারী করিয়া দিয়াছিলেন।
(৬)
জ্যেষ্ঠ-ভ্রাতার [দেবপালদেবের] নির্দ্দেশক্রমে সেই বলবান্ [জয়পাল] দিগ্বিজয়ার্থ চতুর্দ্দিকে প্রধাবিত হইলে, দূর হইতে [তাঁহার] নামমাত্র শ্রবণ করিয়াই, উৎকলাধীশ অবসন্ন হইয়া, [স্বকীয়] রাজধানী পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। প্রাগ্জ্যোতিষের অধীশ্বরও[৩] তদীয় উচ্চ মস্তকে [জয়পালের] যুদ্ধোদ্যমোপশম-কারিণী[৪] আজ্ঞা ধারণ করিয়া, আত্মীয়বর্গ-পরিবেষ্টিত হইয়া, চিরকাল [পরমসুখে] অবস্থিতি করিয়াছিলেন।
- ↑ বিষ্ণু [উপেন্দ্র] ধর্ম্মদ্বেষী [অসুরবর্গকে] যুদ্ধে পরাভূত করিয়া, [পূর্ব্বজ] দেবরাজ ইন্দ্রকে রাজ্যসুখ ভোগ করাইবার পৌরাণিক আখ্যায়িকা ভাগবতে [অষ্টম স্কন্ধে ১৭-১৮ অধ্যায়ে] দ্রষ্টব্য।
- ↑ ডাক্তার হুল্জ্ “ধর্ম্ম”-শব্দের যজ্ঞ-বাচক অর্থ গ্রহণ করিয়া [বিষ্ণু-পক্ষে] ধর্ম্মদ্বেষিগণকে “অসুর” বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়া গিয়াছেন। উপেন্দ্র-পক্ষে তাহা সঙ্গত হইলেও, জয়পাল-পক্ষে তদ্বারা কাহারা “ধর্ম্মদ্বেষী” বলিয়া সূচিত হইয়াছে, তাহা অদ্যাপি নির্ণীত হইতে পারে নাই।
- ↑ ডাক্তার হুল্জ্ লিখিযা গিয়াছেন,—“The sense of this stanza seems to be that Jayapála supported the King of Prágjyotiṣa successfully against the King of Utkala.” শ্লোকের মধ্যে এরূপ আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায় না। ইহাতে উৎকলাধিপতির পরাজয়ের, এবং প্রাগ্জ্যোতিষাধিপতির সহিত সন্ধি-বন্ধনের পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
- ↑ “उपशमित-समित्-संकथां” প্রয়োগ-নৈপুণ্যের পরিচায়ক হইলেও, যুদ্ধ-বাচক “সমিৎ” শব্দ [অমরকোষ ২।৮।১০৬] অপরিচিত বলিয়া স্বীকার করা যায় না। জয়পালের আজ্ঞা শ্রবণ করিয়াই, প্রাগ্জ্যোতিষাধিপতির যুদ্ধসংক্রান্ত [সংকথা] বাদানুবাদ উপশমিত হইয়া গিয়াছিল।
তাঁহার [মুঙ্গেরে আবিষ্কৃত] তাম্রশাসনে [একাদশ শ্লোকে] আপনাকে ধর্ম্মপালের পুত্র বলিয়াই স্পষ্টাক্ষরে পরিচয় প্রদান করিয়া গিয়াছেন। বর্ত্তমান শ্লোকে সেই দেবপাল জয়পালের “পূর্ব্বজ” বলিয়া উল্লিখিত থাকায়, জয়পালকেও ধর্ম্মপালের পুত্র বলিয়াই গ্রহণ করিতে হইবে। কিন্তু অধ্যাপক কিল্হর্ণ স্বয়ং দেবপালদেবের মুঙ্গের-লিপির পাঠোদ্ধার ও বাখ্যা-সাধন করিয়াও লিখিয়া গিয়াছেন,—দেবপালদেব মুঙ্গের-লিপিতে ধর্ম্মপালের পুত্র এবং অন্যান্য লিপিতে ধর্ম্মপালের ভ্রাতার পুত্র বলিয়া উল্লিখিত থাকায়, মুঙ্গের-লিপির উক্তিকে সত্য, এবং অন্যান্য লিপির উক্তিকে ভ্রমাত্মক বলিয়া গ্রহণ করিতে হইবে। যথা—“Considering that the Mungir grant was issued by Devapála himself, it is more than probable that what is stated in it is correct, and that the other inscriptions in this particular are wrong”—J. A. S. B. Vol. LXI, p. 80. কোন তাম্রশাসনের বংশ-বিবরণই ভ্রমাত্মক বলিয়া অনুমান করা যাইতে পারে না; সকল তাম্রশাসনে একই বংশবিবরণ উল্লিখিত রহিয়াছে বলিয়াই অনুমান করা কর্ত্তব্য। এখানে “তস্মাৎ”-শব্দে ধর্ম্মপালকে গ্রহণ করিলেই, প্রকৃত অর্থ প্রকাশিত হইত। “তস্মাৎ”-শব্দের বিকৃতার্থ গ্রহণ করিয়া, দেবপালকে ধর্ম্মপালের ভ্রাতার পুত্র কল্পনা করিয়া, মনীষিগণই এই অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করিয়া গিয়াছেন। (উইকিসংকলন টীকা: বর্তমান ঐতিহাসিক মতে তস্মাৎ শব্দে এখানে আগের শ্লোকের বাক্পালকেই বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ জয়পাল ছিলেন বাক্পালেরই পুত্র। পরের শ্লোকে দেবপালকে জয়পালের পূর্বজ বলা হয়েছে, সহোদর নয়। মুঙ্গের ও ভাগলপুর লিপিকে একত্রে ধরলে দেবপাল জয়পালের জেঠতুতো পূর্বজ ছিলেন। বাক্পাল ও জয়পাল নারায়ণপালের পূর্বপুরুষ ছিলেন বলেই এঁদের কীর্তিকলাপ এই তাম্রশাসনে এত বিশদে বলা হয়েছে। বর্তমান মতের জন্য দ্রষ্টব্য: Dynastic History Of Magadha, George E. Somers, 1977, p. 188.)
৬৬