পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নারায়ণপালদেবের তাম্রশাসন।

(১৪)

 তিনি প্রজ্ঞাবলে এবং বাহুবলে জগদ্বাসিগণকে বিনীত করিয়া, নিয়ত অবিচলিতভাবে আত্মধর্ম্মে অভিনিবিষ্ট হইয়া রহিয়াছেন;—তাঁহার নিকট অর্থিজন সমাগত হইলে, অত্যন্ত কৃতার্থ হইয়া যায়; আর কখনও কাহারও নিকট কিছু প্রার্থনা করিবার ইচ্ছা পোষণ করিতে পারে না।

(১৫)

 তাঁহার চরিত্রে বিচিত্র [বিরুদ্ধ] গুণ-সমাবেশ[১] দেখিতে পাওয়া যায়। তিনি [ঐশ্বর্য্য-গৌরবে] শ্রীপতি [লক্ষ্মীপতি] হইলেও, [অমলিন-কর্ম্মপরায়ণ বলিয়া] অ-কৃষ্ণ-কর্ম্মা;—বিদ্বদ্বর্গের অধিনায়ক হইলেও, [ভোগৈশ্বর্য্যের অধিকারী বলিয়া] মহাভোগী;—প্রতাপে অনল-সদৃশ [অগ্নিতুল্য] বলিয়া প্রতিভাত হইলেও, [কার্য্যকালে] পুণ্যশ্লোক নলের তুল্য বলিয়াই সুপরিচিত।

(১৬)

 তদীয় শরচ্চন্দ্র-মরীচিবৎ শুভ্র যশঃ[২] ত্রিলোকে ব্যাপ্ত হইয়া পড়িয়াছে, মনে হইতেছে যেন, [তাহা অতি শুভ্র বলিয়াই] রুদ্রদেবের [সুবিখ্যাত শুভ্র] অট্টহাস্যও[৩] তাহার শোভাকে ধারণ করিতে পারিতেছে না; এবং [তদীয় যশোরাশির প্রভাতিশয্যে] সিদ্ধাঙ্গনাগণের মস্তকার্পিত [শুভ্র] কেতকীমালাও দীর্ঘকাল দৃষ্টিগোচর না হইয়া, কেবল অলি-গুঞ্জন-রবেই অনুমেয় হইয়া রহিয়াছে।

(১৭)

 দুই ব্যক্তি দুই ব্যক্তিকে বলিয়াছিলেন,—“আমার পক্ষে তপস্যা এবং তোমার পক্ষে রাজ্য”,—সগর রাজা ভগীরথকে এইরূপ বলিয়াছিলেন; বিগ্রহপালদেবও[৪] নারায়ণপালদেবকে এইরূপ বলিয়াছিলেন।

    বাহনের” নামান্তর বলিয়া বোধ হয়। যে “বৃহৎকথা” নামক গ্রন্থ অবলম্বনে “কথাসরিৎসাগর” রচিত হইয়াছিল, তাহার রচয়িতা গুণাঢ্য “সাতবাহন” রাজার সভাসদ ছিলেন বলিয়া উল্লিখিত আছে।

  1. নারায়ণপালদেবের চরিত্রে এইরূপ বিরুদ্ধগুণ-সমাবেশ দেখিতে পাওয়া যায়। রামচরিত্র-বর্ণনায় কবিগুরু ইহার পথ প্রদর্শন করিয়া গিয়াছেন। এই শ্লোকোক্ত “অ-কৃষ্ণ-কর্ম্মা”-পদের ব্যাখ্যায় ডাক্তার হুল্‌জ্ লিথিয়াছেন,—did not commit black deeds, (did not act like Krishna) কিন্তু কৃষ্ণ-নিন্দা রাজকবির অভিপ্রেত ছিল বলিয়া বোধ হয় না।
  2. “मालिन्यं व्योम्नि पापे यशसि धवलता वर्ण्यते हासकीर्त्त्योः” ইত্যাদি সাহিত্যদর্পণোক্ত [সপ্তম পরিচ্ছেদ] “কবিসময়-খ্যাতানি” স্মরণীয়।
  3. রুদ্রদেবের অট্টহাস্য অতি শুভ্র বলিয়াই পরিচিত। তজ্জন্য অতি শুভ্র কৈলাস-গিরিকে তাহার সহোদর বলিয়া বর্ণনা করিবার পরিচয় সাহিত্যদর্পণে [১০।৬৯৭] প্রাপ্ত হওয়া যায়। যথা,—

    विमल एव रवि र्विशदः शशी प्रकृति-शोभन एव हि दर्पणः।
    शिवगिरिः शिवहास-सहोदरः सहज-सुन्दर एव हि सज्जनः॥”

  4. ইহাতে পুত্রহস্তে রাজ্যভার সমর্পণ করিয়া, বিগ্রহপালদেবের বানপ্রস্থ অবলম্বন করিবার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।

৬৯