গৌড়লেখমালা।
অবতরণিকা।
এ পর্য্যন্ত সংস্কৃত ভাষায় বিরচিত যে সকল পুরাতন শিলালিপি এবং ধাতুপট্টলিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে, তন্মধ্যে যাহার সহিত বাঙ্গালার ইতিহাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্ত্তমান আছে, তাহার সংখ্যা নিতান্ত অধিক না হইলেও, কোন্ লিপি কোন্ গ্রন্থে বা প্রবন্ধে মুদ্রিত হইয়াছে, তাহার সন্ধান লাভ করিতে পরিশ্রান্ত হইতে হইত। অধ্যাপক কিল্হর্ণের[১] চেষ্টায় এই অসুবিধা কিয়ৎপরিমাণে বিদূরিত হইয়াছে। কিন্তু বঙ্গভাষা মাত্র অবলম্বন করিয়া, এই সকল পুরাতন লিপির সম্যক্ পরিচয় লাভের উপায় নাই। তজ্জন্য লেখমালা সঙ্কলনের প্রয়োজন অনুভূত হইয়াছে।
আরও একটি কারণ আছে। যে সকল পুরাতন লিপির সহিত বাঙ্গালার ইতিহাসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বর্ত্তমান থাকা প্রকাশিত হইয়াছে, তাহার সহিত বরেন্দ্রমণ্ডলের সম্পর্কই সর্ব্বাপেক্ষা অধিক। কারণ, তাহার সহিত বরেন্দ্রমণ্ডলের [পালবংশীয় এবং সেনবংশীয়] নরপালগণের সম্পর্ক বর্ত্তমান আছে; অনেক লিপি বরেন্দ্রমণ্ডলেই আবিষ্কৃত হইয়াছে; এবং অনেক লিপির প্রকৃত মর্ম্ম হৃদয়ঙ্গম করিতে হইলে, বরেন্দ্রমণ্ডলের বিভিন্ন বিপ্লব-কাহিনীর তথ্যানুসন্ধান করিতে হয়। এই সকল লিপি একত্র সঙ্কলিত না হইলে, গৌড়-বিবরণ সঙ্কলনের চেষ্টা সর্ব্বাংশে সফল হইতে পারে না।
এই লেখমালায় যে সকল প্রাচীন লিপি সঙ্কলিত হইল, তাহা দুই শ্রেণীতে বিভক্ত হইবার যোগ্য। এক শ্রেণী “শিলালিপি” এবং অপর শ্রেণী “তাম্রপট্টলিপি”, নামে কথিত হইতে পারে। “তাম্রপট্টলিপি” অপেক্ষা “শিলালিপির” সংখ্যা অল্প। কিন্তু বঙ্গ-লিপির বিকাশ-পদ্ধতির আলোচনা করিবার পক্ষে “শিলালিপির” মূল্য অধিক বলিয়াই স্বীকৃত হইয়া আসিতেছে। কারণ, তাহাতে অক্ষরগুলি অপেক্ষাকৃত সুস্পষ্টভাবে উৎকীর্ণ।
শিলাপট্টে এবং ধাতুপট্টে লিপি উৎকীর্ণ করাইবার প্রথা কত পুরাতন, তাহার আলোচনায়
- ↑ List of Northern Indian Inscriptions in the Appendix to the Epigraphia Indica Vol. V, by Prof. Kielhorn and Supplement to the same in Vol. VIII. এই তালিকা প্রকাশিত হইবার পরেও অনেক লিপি আবিষ্কৃত হইয়াছে। সুতরাং ইহাতেও অসুবিধা সম্পূর্ণরূপে বিদূরিত হইতে পারে নাই।