পাতা:গৌড়লেখমালা (প্রথম স্তবক).djvu/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গরুড়স্তম্ভ-লিপি।

(৭)

 সুররাজকল্প [দেবপাল] নরপতি [সেই মন্ত্রিবরকে] অগ্রে চন্দ্রবিম্বানুকারী[১] [মহার্হ] আসন প্রদান করিয়া, নানা-নরেন্দ্র-মুকুটাঙ্কিত-পাদপাংসু হইয়াও, স্বয়ং সচকিত[২] ভাবেই সিংহাসনে উপবেশন করিতেন।

(৮)

 অত্রি হইতে[৩] যেমন চন্দ্রের উৎপত্তি হইয়াছিল, সেইরূপ তাঁহার এবং শর্করা দেবীর পরমেশ্বর-বল্লভ[৪] শ্রীমান্ সোমেশ্বর [নামক] পুত্র উৎপন্ন হইয়াছিল।

(৯)

 তিনি বিক্রমে ধনঞ্জয়ের সহিত তুলনা লাভের উপযুক্ত [উচ্চ] স্থানে আরোহণ করিয়াও, [বিক্রম প্রকাশের পাত্রাপাত্র-বিচার-সময়ে ধনঞ্জয়ের ন্যায়] ভ্রান্ত বা নির্দ্দয় হইতেন না; তিনি অর্থিগণকে বিত্তবর্ষণ করিবার সময়ে, [তাহাদের মুখের] স্তুতি-গীতি শ্রবণের জন্য উদ্গর্ব্ব

    “धरा-धरित्री-धरणी-क्षोणी-ज्या-काश्यपी-क्षितिः”

    স্মরণীয়। এই শ্লোকের বর্ণনা-কৌশলে রাজ-ভবনের নিকটেই মন্ত্রি-ভবন অবস্থিত থাকিবার আভাস প্রাপ্ত হওয়া যায়। যেখানে গরুড়-স্তম্ভটি অদ্যাপি তাহার পুরাতন প্রতিষ্ঠাভূমির উপর দণ্ডায়মান আছে, তাহা যে মন্ত্রি-ভবনের একাংশমাত্র, তদ্বিষয়ে সংশয় উপস্থিত হইবার কারণ নাই; সুতরাং রাজধানীও তাহার অনতিদূরেই বর্ত্তমান ছিল।

  1. “उड़ुपच्छवि-पीठं” এই বিশেষণের “উড়ুপ”-শব্দের অর্থ—চন্দ্র। এরূপ অর্থে “উড়ুপ” শব্দের প্রয়োগ কাব্যাদিতে বিরল হইলেও, নক্ষত্র-বাচক উড়ু-শব্দের প্রয়োগ জ্যোতিঃশাস্ত্রে সুপরিচিত। মহাভারতে [বনপর্ব্ব] চন্দ্র-বাচক “উড়ুপ”-শব্দের প্রয়োগ দেখিতে পাওয়া যায়। যথা—

    “अपश्यद्वदनं तस्य रश्मिवन्तमीवोड़ुपम्।”

  2. প্রবল পরাক্রান্ত পাল-সাম্রাজ্যের সিংহাসনে [স্বকীয় মন্ত্রিবরের সম্মুখে] দেবপালদেবের “সচকিত ভাবে” উপবেশন করিবার কারণ কি, তাহা উল্লিখিত হয় নাই। প্রকৃতিপুঞ্জ কর্ত্তৃক দেবপালের পিতামহ গোপালদেব সিংহাসনে প্রতিষ্ঠাপিত হইবার কথা স্মরণ করিলে, লোক-নায়ক মন্ত্রিগণকেই [King-maker] রাজ-নির্ব্বাচনকারী বলিয়া অনুমান করা যাইতে পারে। “সচকিত” শব্দের প্রয়োগে [ইঙ্গিতে] সেই ঐতিহাসিক-তত্ত্ব সূচিত হইয়া থাকিতে পারে। নচেৎ কেবল মন্ত্রিবরের প্রতি পদোচিত সম্মান-প্রদর্শন-বিজ্ঞাপনার্থ “সচকিত” শব্দ ব্যবহৃত হইতে পারে না। ইহাতে বৌদ্ধ-নরপালগণের শাসন-সময়ে বাঙ্গালাদেশে ব্রাহ্মণের সমুচিত পদমর্য্যাদার অভাব না থাকিবারই প্রমাণ প্রাপ্ত হওয়া যায়। এই শ্লোকের ব্যাখ্যায় অধ্যাপক কিল্‌হর্ণ “অগ্রে”-শব্দের অর্থ কারিয়াছেন,—first offered to him a chair of state. মন্ত্রিবংশের কিরূপ প্রাধান্য ছিল, ইহাতেও তাহার পরিচয় প্রাপ্ত হওয়া যায়।
  3. সপ্তর্ষির একতম ঋষি অত্রির নয়ন হইতে ধ্যান-পরম্পরা-পরিণত-পরম-জ্যোতিরূপে চন্দ্র আবির্ভূত হইবার যে পৌরাণিক আখ্যায়িকা প্রচলিত আছে, এই শ্লোকে এবং লক্ষ্মণসেনের তাম্রশাসনে তাহার উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়।
  4. “পরমেশ্বর-বল্লভ”-শব্দ দ্ব্যর্থ;—[সোমেশ্বর পক্ষে] “রাজার প্রিয়”, [চন্দ্রপক্ষে] “মহাদেবের প্রিয়।”

৭৯