লেখমালা।
হইতেন না; তিনি ঐশ্বর্য্যের দ্বারা বহু বন্ধুজনকে [সংবল্গিত] নৃত্যশীল[১] করিতেন; [বৃথা মধুরবচন-প্রয়োগেই তাঁহাদিগের মনস্তুষ্টির চেষ্টা করিতেন না। [সুতরাং] এই সকল জগদ্-বিসদৃশ-স্বগুণগৌরবে তিনি সাধুজনের বিস্ময়ের উৎপাদন করিয়াছিলেন।
(১০)
শিব যেমন শিবার, [এবং] হরি যেমন লক্ষ্মীর পাণিগ্রহণ করিয়াছিলেন, তিনিও সেইরূপ গৃহাশ্রম-প্রবেশ-কামনায় আত্মানুরূপা রল্লাদেবীকে[২] যথাশাস্ত্র [পত্নীরূপে] গ্রহণ করিয়াছিলেন।
(১১)
তাঁহাদিগের কেদারমিশ্র নামে তপ্ত-কাঞ্চন-বর্ণাভ কার্ত্তিকেয়-তুল্য[৩] [এক] পুত্র জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন। তাঁহার [হোমকুণ্ডোত্থিত] অবক্র-ভাবে বিরাজিত সুপুষ্ট হোমাগ্নি-শিখাকে চুম্বন করিয়া, দিক্চক্রবাল যেন সন্নিহিত হইয়া পড়িত। তাঁহার বিস্ফারিত শক্তি দুর্দ্দমনীয় বলিয়া পরিচিত ছিল। আত্মানুরাগ-পরিণত অশেষ বিদ্যা [যোগ্যপাত্র পাইয়া] তাঁহাকে প্রতিষ্ঠা দান করিয়াছিল। তিনি স্ব-কর্ম্মগুণে দেব-নরের হৃদয়-নন্দন হইয়াছিলেন।[৪]
- ↑ গতিবোধক বল্গ ধাতু হইতে “সংবল্গিত” হইয়াছে। অশ্বের গতিবিশেষ “বল্গিত” নামে পরিচিত। ইহার ভাবার্থ, “নৃত্যশীল” বলিয়া গৃহীত হইল।
- ↑ পণ্ডিত হরচন্দ্র চক্রবর্ত্তী মহাশয় “তরলাদেবী” পাঠ উদ্ধৃত করিয়াছিলেন। উইল্কিন্সের ইংরাজী অনুবাদে “রন্নাদেবী” পাঠ দেখিতে পাওয়া যায়। প্রকৃত পাঠ [রল্লা] স্তম্ভগাত্রে স্পষ্টাক্ষরে উৎকীর্ণ আছে। এই নাম এ কালের পক্ষে রুচিকর না হইলেও, সেকালে সুপরিচিত ছিল বলিয়াই, ইহার ব্যুৎপত্তি রঘুনাথ-চক্রবর্ত্তী-কৃত অমর-টীকায় ব্যাখ্যাত আছে। “রল্লা” শব্দের অর্থ, রমণীয়া—ইচ্ছাবিবর্দ্ধিনী।
- ↑ এই শ্লোকে এক অর্থে কার্ত্তিকেয়কে, অন্য অর্থে কেদার মিশ্রকে, সূচিত করিবার জন্য অনেকগুলি দ্ব্যর্থ শব্দ ব্যবহৃত হইয়াছে। মিশ্র-পক্ষে “শিখি-শিখা” হোমাগ্নিশিখা; কার্ত্তিকেয়-পক্ষে “ময়ূর-পিচ্ছ”। মিশ্র-পক্ষে স্ফার-শক্তি” বাহুবল; কার্ত্তিকেয়-পক্ষে “শক্তি” নামক অস্ত্র। মিশ্র-পক্ষে “বিদ্যা” জ্ঞান; কার্ত্তিকেয-পক্ষে “মাতৃকাগণ”। মিশ্র-পক্ষে “স্বক্রিয়া” যাগ যজ্ঞ, কার্ত্তিকেয়-পক্ষে “অসুর-নিপাত”। মিশ্র-পক্ষে “জাতরূপ” প্রশস্তরূপ; কার্ত্তিকেয়-পক্ষে “কাঞ্চন”—এইরূপ অর্থ গ্রহণ করিলে, শ্লিষ্ট-প্রয়োগ-কৌশল বুঝিতে পারা যাইবে। কার্ত্তিকেয়ের ধ্যানের সঙ্গেও ইহার কিছু সম্পর্ক আছে। যথা—
“कार्त्तिकेयं महाभागं मयूरोपरि-संस्थितं।
तप्त-काञ्चन-वर्णाभं शक्ति-हस्तं वर-प्रदं॥
द्विभुजं शत्रु-हन्तारं नानालङ्कार-भूषितं।
प्रसन्न-वदनं देवं सर्व्व-सेना-समावृतम्॥” - ↑ এই শ্লোকের প্রথম চরণোক্ত সমাসান্ত পদটি অধ্যাপক কিল্হর্ণ কর্ত্তৃক ব্যাকরণ-বিরুদ্ধ বলিয়া নিন্দিত হইয়াছে। তিনি ইহাকে ব্যাকরণ-দুষ্ট বলিষা, লিখিয়া গিয়াছেন,—“As regards grammar I need draw attention only to the first compound in verse 11, which is formed incorrectly.” “শিখি-শিখা দিক্-চক্রবালকে চুম্বন করিতেছে” বলিয়া ব্যাখ্যা করিলে, ব্যাকরণ-দোষ সজ্ঞাটিত হইতে পারে; কিন্তু কবি বলিয়াছেন,—“দিক্চক্রবালই শিখি শিখা চুম্বন করিতেছে।” হোমাগ্নি-শিখা [অজিহ্ম] অবক্র হইলে, “যোগ-ক্ষেম” সূচিত করে। অধ্যাপক কিল্হর্ণ তৎপ্রতি লক্ষ্য না করিষা, লিখিয়া গিয়াছেন,—“None of the ordinary meanings of ajimha appears very appropriate”. “অজিহ্ম”-শব্দের প্রয়োগ দুর্লভ হইলেও, অপরিচিত বলিয়া কথিত হইতে পারে না। যখা—
“अजिह्मामशठां शुद्धां जीवेत् ब्राह्मण जीविकाम्।”
৮০