うや গৌড়ের ইতিহাস । খৃষ্টপূৰ্ব্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে রচিত জৈন-অঙ্গ গ্রন্থে রাঢ়ের নাম পাওয়া যায়। জৈন আচারাঙ্গ সূত্রে আছে—শেষ তীর্থঙ্কর মহাবীর স্বামী এখানে দ্বাদশবর্ষ থাকিয়া বন্যজাতির মধ্যে ধৰ্ম্মপ্রচার করেন (খৃঃ পূঃ ষষ্ঠ শতাব্দী)। মহাবীরের অপর নাম বৰ্দ্ধমান স্বামী। বৰ্দ্ধমান স্বামী যে দেশে জৈনধৰ্ম্ম প্রচার করেন, সেই স্থানের পরে বদ্ধমান নাম হয় । মহাবীর স্বামী রাঢ়ের বস্ত্যজাতির দ্বারা অত্যন্ত উৎপীড়িত হইয়াছিলেন। জৈনদিগের ত্রয়োবিংশ তীর্থঙ্কর পাশ্বনাথ ৭৭৭ খৃষ্টপূৰ্ব্বাদে মানভূম জেলাস্থ সমেতশিখরে মোক্ষলাভ করেন ; সেই জন্ত সমেতশিখরের পাশ্বনাথ বা পরেশনাথ নাম হয় । জৈন হরিবংশে লিখিত আছে, শ্রীকৃষ্ণের জ্ঞাতি নেমিনাথ অঙ্গ-বঙ্গাদি দেশে জৈনধৰ্ম্ম প্রচার করিয়াছিলেন। পাশ্বনাথ, অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ ও রাঢ়ে চাতুর্যাম মত প্রচার করেন। গ্রীক ভৌগোলিক এরিয়ানের গ্রন্থে কটদ্বীপ অর্থাৎ কাটোয়ার এবং আনিসেষ্টিসের গ্রন্থে অজয় নদের উল্লেখ আছে। পাণিনির অষ্টাধ্যায়ী (৬২,১০০) ও জৈন হরিবংশ পাঠে জানা যায় যে, পূৰ্ব্বদেশে অরিষ্টপুর ও গৌড়পুর নামে নগর ছিল । অরিষ্টপুর উত্তর রাঢ়ে ছিল বলিয়া মনে হয়। কোন সময়ে রাঢ়ের অধিকাংশ স্থান জঙ্গলে আচ্ছন্ন ছিল । সাওতাল ভাষায় বীরশব্দের অর্থ জঙ্গল । বীরভূমি শব্দের অর্থ জঙ্গলভূমি। রাঢ় দুইভাগে বিভক্ত ছিল—উত্তর রাঢ় ও দক্ষিণ রাঢ় । অজয় নদ রাঢ়কে এই দুইভাগে বিভক্ত করিয়াছিল । দামোদর রাঢ়ের প্রসিদ্ধ নদ । সাঁওতালেরা এই নদীতে মৃত আত্মীয় স্বজনের মাথার খুলির টুকরা নিক্ষেপ করিয়া থাকে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে রাঢ়ে বৌদ্ধধৰ্ম্ম, জৈনধৰ্ম্ম, তান্ত্রিক বৌদ্ধমত ও শাক্তমত প্রাধান্তলাভ করিয়াছিল। রাঢ়দেশে কয়েকটি পীঠস্থান আছে। উহা তান্ত্রিক বৌদ্ধগণের পীঠস্থানের হিন্দু-সংস্করণ কি না বলা যায় না । জৈনশ্রাবক ও বৌদ্ধশ্রমণদিগের প্রভাব খুষ্টীয় ষষ্ঠশতাব্দী পৰ্য্যন্ত
পাতা:গৌড়ের ইতিহাস (প্রথম খণ্ড).djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।