চড়িতে পারিতেন না। পালকীর নাড়া চাড়াতে তাঁহার এমনি কষ্ট হইত যে তিনি তাহাতে মৃত্যুযাতনা বোধ করিতেন। তিনি আয়ুর্ব্বেদ শাস্ত্র বিলক্ষণ অবগত ছিলেন। তিনি গ্রামে চিকিৎসা করিয়া বেড়াইতেন, কিন্তু কাহার নিকট হইতে কিছু লইতেন না। একদা গড়াই গ্রামে একটী রোগী দেখিতে তাঁহাকে পালকী করিয়া তথায় যাইতে হইয়াছিল। পালকীর নাড়া চাড়ায় তিনি রাস্তায় এমনি কষ্ট অনুভব করিয়াছিলেন যে গড়াই গ্রামে পৌঁছিয়া স্নান করিয়া, ডাব খাইয়া ধড়ে প্রাণ আসিল এমন বোধ করিলেন! তেইশ বৎসর বয়ঃক্রম সময়ে যখন তাঁহার বায়ুরোগ উপস্থিত হয়, তখন বাটীমধ্যে ও গ্রাম মধ্যে হুলস্থূল পড়িয়া গেল। মহাযোগেন্দ্র রস ঔষধ, মধ্যম নারায়ণ তৈল, মিছরির পানা, চিনির পানা, পেঁপে, ডাবের নেয়াপাতি, তালের ফোঁফল, রুইমাছের মুড়ো প্রভৃতি বায়ু রোগের সেবার জন্য যত উপকরণ আবশ্যক তাহা আহরণে বাটীর সমস্ত লোক ও গ্রামের বন্ধুবান্ধব প্রবৃত্ত হইলেন। বায়ুরোগ নিবন্ধন তিনি একাকী থাকিতে পারিতেন না, গ্রামের লোকে পালা করিয়া দিন রাত তাহার নিকট বসিয়া থাকিয়া তাঁহার সহিত গল্প করিত। পুষ্করিণীতে কাহার জালে বৃহৎ রুই মাছ পড়িলে তাহা তাঁহাকে আনিয়া দিত। সেকালে পল্লীগ্রামে এখন অপেক্ষা পরস্পর সহানুভূতি অধিক ছিল। চৈতন্য–চরিতামৃতে লেখা আছে,“দেবসম্বন্ধ
পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/১২৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৮
গ্ৰাম্য উপাখ্যান ।
