পিসিঠাকুরাণী তাঁহার মাতার পাশ্বে সর্ব্বদা বসিয়া থাকিতেন। পিসিঠাকুরাণী অতিশয় বুদ্ধিমতী ছিলেন। তিনি বলিতেন যে মন বেলোয়ারি গ্লাসের ন্যায়, একবার মন ভাঙ্গাভাঙ্গি হইলে, তাহা আর ঠিক যোড়া লাগে না! অতএব বন্ধুতাতে অত্যন্ত সতর্কতা আবশ্যক। ইহার এক নাতনী ছিল, সে ষোড়শবর্ষ বয়ঃক্রমের সময় অপস্মার রোগে আক্রান্ত হইয়া মরে। সে পাড়ার একটী বালিকার সহিত “গঙ্গাজল” পাতাইয়াছিল। সেই বালিকা একবার আমাদিগের বাটিতে আসিয়াছিল, কোন প্রয়োজন বশতঃ ঘরের বাহিরে যাইবে এমন সময়ে বৃষ্টি পড়িতেছিল, নাতিনী বলিল “যাইওনা যাইওনা, গঙ্গাজলে কুব্জল পড়িয়া সব কুব্জল হইয়া যাইবে।” আমার পিসিঠাকুরাণীর উক্ত নাতিনী অশিক্ষিতা কিন্তু আশিক্ষিতা হইয়াও এই বাক্যে কি অসাধারণ কবিত্বশক্তি প্রকাশ করিয়াছিল। এইরূপ পূর্ব্বের কত কথা স্মরণ হইতে লাগিল তাহা আর কি বলিব? পূর্ব্বের সে কথা সকল স্মরণ হইয়া মন কিরূপ আকুল হইতেছে তাহা বলিতে পারি না। আমি মনে করিয়াছিলাম যে আমার এই বৃদ্ধ অবস্থাতে আমার জন্মস্থানে জীবনের অবশিষ্ট কাল যাপন করিব, কবির “Oh blest Retirement! friend to life’s decline” “হে বার্দ্ধক্যসুহৃৎ! মঙ্গল নিভৃত বাস” এই বাক্যের যাথার্থ্য অন্য কবির কিন্তু বিধাতা সেরূপ
পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/১৩৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্রাম্য উপাখ্যান।
৯১
