দিন রামগোপাল বাবুর সহিত আমাদের পরামর্শ হইল যে তাঁহার Lotus ষ্টীমারে আরোহণ করিয়া পূজার ছুটী বঙ্গদেশভ্রমণে অতিবাহিত করা যাইবে। তাঁহার লোটস ষ্টীমারটী ক্ষুদ্র, কিন্তু দেখিতে অতি সুন্দর, যথার্থই তাহা তাহার নামের উপযুক্ত ছিল। সেটাকে যথার্থ পদ্মের ন্যায় দেখাইত। বাষ্পীয় পোত আরোহণ করিয়া বঙ্গদেশের দূরস্থ স্থান ভ্রমণ করা তখন দুঃসাহসিক কার্য্য বলিয়া লোকে মনে করিত। এরূপ দুঃসাহসিক কার্য্যে আমি প্রবৃত্ত হইব, পূর্ব্বে মাতা ঠাকুরাণী তাহা জানিতে পারিলে ভ্রমণে যাইতে দিবেন না, অতএব তিনি যাহাতে টের না পান অথচ কার্য্যটী সমাধা করিতে হইবে এই জন্য একটি ষড়যন্ত্র করিলাম। সে ষড়যন্ত্রের ভিতর কেবল আমি ও আমার স্বর্গীয় পিতাঠাকুর মহাশয় ছিলেন। স্থির হইল, মাতা ঠাকুরাণীকে বলা হইবে যে, আমি রামগোপাল বাবুর স্বগ্রাম বাঘাটী যাইতেছি, তাহার পর ক্রমে ক্রমে পিতা ঠাকুর যথার্থ কথা ব্যক্ত করিবেন। যে দিন আমরা বাষ্পীয় পোত আরোহণ করিব সে দিন উৎসাহের সীমা কি? সকাল সকাল আহারাদি করিয়া আমরা কয়জনে রামগোপাল বাবুর বাটীতে উপস্থিত হইলাম। তখন ব্যাগ নামক পদার্থ —যাহা এক্ষণে কাপড়, তরকারী, ফল, হুঁকা, তামাক প্রভৃতি জাতের জিনিসে পরিপূর্ণ হইয়া ভদ্রলোককে ভদ্র মুটিয়াতে পরিণত করে-তাহার ব্যবহার ছিল না।
পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/১৫২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
গ্ৰাম্য উপাখ্যান ।
