খিচুড়ি রাঁধিলাম। ভোজন সমাধা করিয়া আমরা ভগ্নাবশেষ দর্শনে বহির্গত হইলাম। আমরা দেওয়ান-খানা নামক একটি ভগ্নাবশেষ দেখিলাম। এই খানে বাদসাহের প্রত্যহ দরবার হইত। প্রাচীরের উপরে অতীব সুক্ষ্ম কারুকার্য্য দেখিলাম। সেই কারুকার্য্যের মধ্যে কোরান হইতে উদ্ধৃত কয়েকটা আরবী বাক্য খোদিত দৃষ্ট হইল। আমি যেন আমার সম্মুখে দেখিতে পাইলাম যে, বাদসাহ সিংহাসনে আসীন আছেন, আর উজীর ও অন্যান্য রাজকর্ম্মচারিগণ তাহাকে বেষ্টন করিয়া অবনতজানু হইয়া উপবিষ্ট আছেন, অনতিদূরে সুবিচারপ্রার্থী অসংখ্য মুসলমান ও হিন্দু দণ্ডায়মান রহিয়াছে। তৎপরে চটকা ভাঙ্গিয়া গেলে বোধ হইল যেন আমি স্বপ্ন দেখিতেছিলাম। মানুষ্যের কীর্ত্তি কি অস্থায়ী! যে স্থান এরূপ জনতা ও লৌকিক কার্য্যের ব্যস্ততার আধার ছিল, তাহা এক্ষণে বিজন ও ভয়ানক হিংস্র জন্তুর আবাস হইয়াছে। তৎপরে আমরা প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড কয়েকটি পুষ্করিণী দেখিলাম। সে সকল পুষ্করিণী এক একটি হ্রদের ন্যায়। তাহাতে বৃহৎ বৃহৎ কুমীর ভাসিতে দেখা গেল। এক স্থানে আমরা কলিকাতার অক্টারলনী মনুমেণ্টের ন্যায় একটি অত্যুচ্চ স্তম্ভাকৃতি গৃহ দেখিলাম। শুনিলাম যে, তাহার উপর রাজ-জ্যোতির্ব্বেত্তা রাত্রে উঠিয়া নক্ষত্র পর্য্যবেক্ষণ করিতেন। আমার ক্ষণেকের জন্য স্বপ্নের ন্যায় বোধ হইল, যেন অদ্যাপি রাত্রে উষ্ণীষধারী
পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/১৬১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গ্রাম্য উপাখ্যান
১১৫
