হাতে করিয়া প্রত্যেক বাটীর কাহার কি অভাব আছে তাহা জিজ্ঞাসা করিয়া আসিতেন, তৎপরে কাহাকে চাউল, কাহাকে ডাইল, কাহাকেও বা বস্ত্র পঠাইয়া দিতেন। গ্রামস্থ লোকের ক্রিয়া কলাপে উপস্থিত থাকিয়া নিজের বাটীর কার্য্যের মত তাহার তত্ত্বাবধান করিতেন। তিনি পাণ্ডুরোগের পৈতৃক ঔষধ বিনামূল্যে বিতরণ করিতেন। ইহাতে বাটীতে অনেক রোগীর সমাগম হইত। সেই সকল রোগী যে কয়দিন বাটীতে থাকিত তিনি সে কয়দিন প্রাণপণে তাহাদিগের শুশ্রূষা করিতেন এমন কি স্বহস্তে শয্যাগত রোগীদিগের মলমূত্রাদি পরিষ্কার করিতেন। আমরা জানি এক্ষণকার অনেক ইংরাজী সভ্যতাভিমানী ব্যক্তি এই কথা শুনিয়া নাক সিঁটকাইবেন, এমন কি নিজের পিতা মাতা পীড়িত হইলে তাঁহারা তাঁহাদের এরূপ সেবা করিতে ঘৃণা বোধ করেন, কিন্তু তাঁহাদিগের আদর্শ স্থল ইংরাজ জাতির সম্ভ্রান্ত রমণীরা পর্য্যন্ত এরূপ শুশ্রূষাকে (Nursing the Sick) অতি পবিত্র কার্য্য জ্ঞান করেন। সেই সকল সভ্যতাভিমানী ব্যক্তিরা দেখুন যে সেকালের তাঁহাদিগের হিসাবে অশিক্ষিত পাড়াগেঁয়ে ব্যক্তি এ বিষয় তাঁহাদিগের অপেক্ষা কত শ্রেষ্ঠ ছিল। যদি সভ্যতা মনুষ্যহৃদয়ের এরূপ উচ্চগুণ সকলের বিলোপ সাধন করে তবে সে সভ্যতায় আবশ্যক কি? রামসুন্দর বসু অতি পুত্রবৎসল ছিলেন। তিনি নিজে স্বহস্তে পাক করিয়া পুত্রদিগকে খাওয়াইতে
পাতা:গ্রাম্য উপাখ্যান - রাজনারায়ণ বসু.pdf/৯৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০
গ্রাম্য উপাখ্যান
