পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
ঘরে-বাইরে

উঠল। বুঝলুম, সে আদ্যাশক্তিকে দেখতে পেয়েছে। বুঝতে পারলুম, তার রক্তের মধ্যে আমারই সৃষ্টির কাজ আরম্ভ হয়েছে। পরদিন সন্দীপ আমাকে এসে বললেন, এ কী মন্ত্র তােমার! ও বালক তাে আর সেই বালক নেই, ওর পলতেয় এক মুহূর্তে শিখা ধরে গেছে। তােমার এ আগুনকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখবে কে! একে একে সবাই আসবে। একটি একটি করে প্রদীপ জ্বলতে জ্বলতে একদিন যে দেশে দেয়ালির উৎসব লাগবে।

 নিজের এই মহিমার নেশায় মাতাল হয়েই আমি মনে মনে ঠিক করেছিলুম ভক্তকে আমি বরদান করব। আর, এও আমার মনে ছিল, আমি যা চাইব তাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।

 সেদিন সন্দীপের কাছ থেকে ফিরে এসেই চুল খুলে ফেলে আমি নতুন করে চুল বাঁধলুম। ঘাড়ের থেকে এঁটে চুলগুলােকে মাথার উপরের দিকে টেনে তুলে আমার মেম আমাকে এক রকম খোঁপা বাঁধতে শিখিয়েছিলেন; আমার স্বামী আমার সেই খোঁপা খুব ভালােবাসতেন। তিনি বলতেন, ঘাড় জিনিসটা যে কত সুন্দর হতে পারে তা বিধাতা কালিদাসের কাছে প্রকাশ না করে আমার মতাে অ-কবির কাছে খুলে দেখালেন। কবি হয়তাে বলতেন পদ্মের মৃণাল, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যেন মশাল; তার ঊর্ধ্বে তােমার কালাে খোঁপার কালাে শিখা উপরের দিকে জ্বলে উঠেছে। এই বলে তিনি আমার সেই চুল-তােলা ঘাড়ের উপর— হায় রে, সে কথা আর কেন!

 তার পর তাঁকে ডেকে পাঠালুম। আগে এমন ছােটোখাটো সত্যমিথ্যা নানা ছুতােয় তাঁর ডাক পড়ত। কিছুদিন থেকে ডাকবার সব উপলক্ষই বন্ধ হয়ে গেছে, বানাবার শক্তিও নেই।