কাপড়ের কী হল?
পুড়িয়ে ফেলেছে।
সেখানে আর কে ছিল?
লােকের সংখ্যা ছিল না, তারা চীৎকার করতে লাগল, বন্দে মাতরং! সেখানে সন্দীপ ছিলেন, তিনি একমুঠো ছাই তুলে নিয়ে বললেন, ভাই-সব, বিলিতি ব্যাবসার অন্ত্যেষ্টিসৎকারে তােমাদের গ্রামে এই প্রথম চিতার আগুন জ্বলল। এই ছাই পবিত্র। এই ছাই গায়ে মেখে ম্যাঞ্চেস্টারের জাল কেটে ফেলে নাগা সন্ন্যাসী হয়ে তােমাদের সাধনা করতে বেরােতে হবে।
আমি পঞ্চুকে বললুম, পঞ্চু, তােমাকে ফৌজদারি করতে হবে।
পঞ্চু বললে, কেউ সাক্ষি দেবে না।
কেউ সাক্ষি দেবে না? সন্দীপ! সন্দীপ!
সন্দীপ তার ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললে, কী, ব্যাপারটা কী?
এই লােকটার কাপড়ের বস্তা ওর জমিদার তােমার সামনে পুড়িয়েছে, তুমি সাক্ষি দেবে না?
সন্দীপ হেসে বলে, দেব বৈকি। কিন্তু, আমি যে ওর জমিদারের পক্ষে সাক্ষী।
আমি বললুম, সাক্ষী আবার জমিদারের পক্ষে কী? সাক্ষী তাে সত্যের পক্ষে।
সন্দীপ বললে, যেটা ঘটেছে সেটাই বুঝি একমাত্র সত্য?
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, অন্য সত্যটা কী?
সন্দীপ বললে, যেটা ঘটা দরকার। যে সত্যকে আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সেই সত্যের জন্যে অনেক মিথ্যে চাই— যেমন মায়া দিয়ে এই জগৎ গড়া হচ্ছে। পৃথিবীতে যারা সৃষ্টি করতে এসেছে তারা সত্যকে মানে না, তারা সত্যকে বানায়।
অতএব?
অতএব, তােমরা যাকে মিথ্যে সাক্ষি বলাে আমি সেই মিথ্যে সাক্ষি দেব। যারা রাজ্য বিস্তার করেছে, সাম্রাজ্য গড়েছে, সমাজ বেঁধেছে, ধর্মসম্প্রদায় স্থাপন করেছে, তারাই তােমাদের বাঁধা সত্যের আদালতে বুক ফুলিয়ে মিথ্যে সাক্ষি দিয়ে এসেছে। যারা শাসন করবে তারা মিথ্যেকে ডরায় না, যারা শাসন মানবে তাদের জন্যেই সত্যের লােহার শিকল। তােমরা কি ইতিহাস পড় নি? তােমরা কি জান না, পৃথিবীর বড়াে বড়াে রান্নাঘরে যেখানে রাষ্ট্রযজ্ঞে পলিটিক্সের খিচুড়ি তৈরি হচ্ছে সেখানে মশলাগুলাে সব মিথ্যে?