সেইদিনই পঞ্চুর জমি কিনে রেজেস্ট্রি করে আমি দখল করে বসলুম। তার পর থেকে ঝুটোপুটি চলল।
পঞ্চর বিষয়সম্পত্তি ওর মাতামহের। পঞ্চু ছাড়া তার ওয়ারেশ কেউ ছিল না, এই কথাই সকলের জানা। হঠাৎ কোথা থেকে এক মামী এসে জুটে জীবনস্বত্বের দাবি করে তার পুঁটুলি, তার প্যাট্রা, হরিনামের ঝুলি এবং একটি প্রাপ্তবয়স্ক বিধবা ভাইঝি নিয়ে পঞ্চুর ঘরের মধ্যে উপস্থিত।
পঞ্চু অবাক হয়ে বললে, আমার মামী তাে বহুকাল হল মারা গেছে।
তার উত্তর, প্রথম পক্ষের মামী মারা গেছে বটে, কিন্তু দ্বিতীয় পক্ষের তাে অভাব হয় নি।
কিন্তু মামার মৃত্যুর অনেক পরে যে মামী মরেছে দ্বিতীয় পক্ষের তাে সময় ছিল না।
স্ত্রীলোেকটি স্বীকার করলে দ্বিতীয় পক্ষটি মৃত্যুর পরের নয়, মৃত্যুর পূর্বের। সতীনের ঘর করবার ভয়ে বাপের বাড়ি ছিল, স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রবল বৈরাগ্যে সে বৃন্দাবন চলে যায়। কুণ্ডু-জমিদারের আমলারা এ-সব কথা কেউ কেউ জানে, বােধ করি প্রজাদেরও কারাে কারাে জানা আছে, আর জমিদার যদি জোরে হাঁক দেয় তবে বিবাহের সময়ে যারা নিমন্ত্রণ খেয়েছিল তারাও বেরিয়ে আসতে পারে।
সেদিন দুপুরবেলা পঞ্চুর এই দুর্গ্রহ নিয়ে যখন আমি খুব ব্যস্ত আছি এমন সময় অন্তঃপুর থেকে বিমলা আমাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি চমকে উঠলুম; জিজ্ঞাসা করলুম, কে ডাকছে?
বললে, রানীমা।
বড়ােরানীমা?
না, ছােটোরানীমা।
ছােটোরানী! মনে হল, একশাে বছর ছােটোরানী আমাকে ডাকে নি। বৈঠকখানা-ঘরে সবাইকে বসিয়ে রেখে আমি অন্তঃপুরে চললুম। শোবার ঘরে বিমলাকে দেখে আরাে আশ্চর্য হলুম যখন দেখা গেল, সর্বাঙ্গে বেশি নয় অথচ বেশ একটু, সাজের আভাস আছে। কিছুদিন এই ঘরটার মধ্যেও যত্নের লক্ষণ দেখি নি, সব এমন এলােমেলাে হয়ে গিয়েছিল যে মনে হত যেন ঘরটা সুদ্ধ অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। ওরই মধ্যে আগেকার মতাে আজ একটু পারিপাট্য দেখতে পেলুম।
আমি কিছু না বলে বিমলার মুখের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে রইলুম। বিমলার মুখ একটু লাল হয়ে উঠল; সে ডান হাত দিয়ে তার বাঁ হাতের বালা দ্রুত