পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নিখিলেশের আত্মকথা

আমার নামে কাগজে প্যারাগ্রাফ এবং চিঠি বেরােতে শুরু হয়েছে। শুনছি, একটা ছড়া এবং ছবি বেরােবে, তারও উদ্‌যােগ হচ্ছে। রসিকতার উৎস খুলে গেছে, সেইসঙ্গে অজস্র মিথ্যেকথার ধারাবর্ষণে সমস্ত দেশ একেবারে পুলকিত। জানে যে, এই পঙ্কিল রসের হােরিখেলায় পিচকিরিটা তাদেরই হাতে; আমি ভদ্রলােক রাস্তার একপাশ দিয়ে চলেছি, আমার গায়ের আবরণখানা সাদা রাখবার উপায় নেই।

 লিখেছে, আমার এলেকায় আপামর সাধারণ সকলেই স্বদেশীর জন্যে একেবারে উৎসুক হয়ে রয়েছে, কেবল আমার ভয়েই কিছু করতে পারছে না। দুই-একজন সাহসী যারা দিশি জিনিস চালাতে চায় জমিদারি চালে আমি তাদের বিধিমতে উৎপীড়ন করছি। পুলিসের সঙ্গে আমার তলে তলে যােগ আছে, ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে আমি গােপনে চিঠি চালাচালি করছি এবং বিশ্বস্তসূত্রে খবরের কাগজ খবর পেয়েছে যে, পৈতৃক খেতাবের উপরেও স্বােপার্জিত খেতাব যােগ করে দেবার জন্য আমার আয়ােজন ব্যর্থ হবে না। লিখেছে: স্বনামা পুরুষাে ধন্য; কিন্তু দেশের লােক বিনামার ফরমাশ দিয়েছে, সে খবরও আমরা রাখি।

 আমার নামটা স্পষ্ট করে দেয় নি, কিন্তু বাইরের অস্পষ্টতার ভিতর থেকে সেটা খুব বড়াে করে ফুটে উঠেছে।

 এ দিকে মাতৃবৎসল হরিশ কুণ্ডুর গুণগান করে কাগজে চিঠির পর চিঠি বেরােচ্ছে। লিখেছে, মায়ের এমন সেবক দেশে যদি বেশি থাকত তা হলে এতদিনে ম্যাঞ্চেস্টারের কারখানা-ঘরের চিমনিগুলাে পর্যন্ত বন্দে মাতরমের সুরে সমস্বরে রামশিঙে ফুঁকতে থাকত।

 এ দিকে আমার নামে লাল কালিতে লেখা একখানি চিঠি এসেছে; তাতে খবর দিয়েছে কোথায় কোন্ কোন্ লিভারপুলের নিমকহালাল জমিদারের কাছারি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বলেছে: ভগবান পাবক এখন থেকে এই পাবনের কাজে লাগলেন, মায়ের যারা সন্তান নয় তারা যাতে মায়ের কোল জুড়ে থাকতে না পারে তার ব্যবস্থা হচ্ছে।

 নাম সই করেছে: মায়ের কোলের অধম শরিক, শ্রীঅম্বিকাচরণ গুপ্ত।

 আমি জানি, এ-সমস্তই আমার এখানকার সব ছাত্রদের রচনা। আমি