পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬৭
ঘরে-বাইরে

এমনি করেই বিচার করেন। আমরা যা এতকাল ধরে জমিয়েছি আমাদের উপরেই তা খরচ হবে।

 ইংরেজি-পড়া বললে, আচ্ছা ভালাে, তাই খরচ হয়ে যাক। কিন্তু এর মধ্যে আমাদেরও একটা সুখ আছে— আমাদেরই এবার জিত— যে আইন ওদের সকলের চেয়ে বড়াে শক্তি সেই আইনকে আজ আমরা ধূলিসাৎ করেছি; এতদিন ওরা রাজা ছিল, আজ ওদেরও আমরা ডাকাতি ধরাব। এ কথা ইতিহাসে কেউ লিখবে না, কিন্তু এ কথা চিরদিন আমাদের মনে থাকবে।

 এ দিকে খবরের কাগজে অখ্যাতিতে আমি বিখ্যাত হয়ে পড়লুম। শুনছি চক্রবর্তীদের এলাকায় নদীর ধারে শ্মশান-ঘাটে দেশসেবকদের দল আমার কুশপুত্তলি বানিয়ে খুব ধুম করে সেটাকে দাহ করেছে; তার সঙ্গে আরাে অনেক অপমানের আয়ােজন ছিল। এরা কাপড়ের কল খুলে যৌথ কারবার করবে বলে আমাকে খুব বড়াে শেয়ার কেনাতে এসেছিল। আমি বলেছিলুম, যদি কেবল আমার এই-ক’টি টাকা লােকসান যেত খেদ ছিল না। কিন্তু তােমরা যদি কারখানা খােল তবে অনেক গরিবের টাকা মারা যাবে, এইজন্যেই আমি শেয়ার কিনব না।

 কেন মশাই, দেশের হিত কি আপনি পছন্দ করেন না?

 কারবার করলে দেশের হিত হতেও পারে, কিন্তু দেশের হিত করব বললেই তাে কারবার হয় না। যখন ঠাণ্ডা ছিলুম তখন আমাদের ব্যবসা চলে নি। আর, খেপে উঠেছি বলেই কি আমাদের ব্যবসা হু হু করে চলবে?

 এক কথায় বলুন-না, আপনি শেয়ার কিনবেন না।

 কিনব যখন তােমাদের ব্যবসাকে ব্যবসা বলে বুঝব। তােমাদের আগুন জ্বলছে বলেই যে তােমাদের হাঁড়িও চড়বে, সেটার তাে কোনাে প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখছি নে।

 এরা মনে করে, আমি খুব হিসাবি, আমি কৃপণ। আমার স্বদেশী কারবারের হিসাবের খাতাটা এদের খুলে দেখাতে ইচ্ছা করে। আর সেই-যে একদিন মাতৃভূমিতে ফসলের উন্নতি করতে বসেছিলুম, তার ইতিহাস এরা বুঝি জানে না। ক-বছর ধরে জাভা মরিশস থেকে আখ আনিয়ে চাষ করালুম। সরকারি কৃষিবিভাগের কর্তৃপক্ষের পরামর্শে যত রকমের কর্ষণ বর্ষণ হতে পারে তার কিছুই বাকি রাখি নি। অবশেষে তার থেকে ফসলটা কী হল? সে আমার এলাকার চাষীদের চাপা অট্টহাস্য। আজও সেটা চাপা রয়ে গেছে। তার পরে