মেজোরানীদিদির ভয় ভাবনা আজ আমার প্রাণে সুধা বর্ষণ করলে। অন্নপূর্ণা, তােমাদের হৃদয়ের দ্বারে আমাদের ভিক্ষা কোনােদিন ঘুচবে না।
ঠাকুরপাে, তােমার শােবার ঘরের পাশে ঐ-যে টাকাটা রেখেছ, ওটা ভালাে করছ না। কোন দিক থেকে ওরা খবর পাবে আর শেষকালে— আমি টাকার জন্যে ভাবি নে, ভাই— কী জানি—
আমি মেজোরানীকে ঠাণ্ডা করবার জন্যে বললুম, আচ্ছা, ও টাকাটা বের করে এখনই আমাদের খাজাঞ্চিখানায় পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরশুদিনই কলকাতার ব্যাঙ্কে জমা করে দিয়ে আসব।
এই বলে শােবার ঘরে ঢুকে দেখি পাশের ঘর বন্ধ। দরজাটা ধাক্কা দিতেই ভিতর থেকেই বিমলা বললে, আমি কাপড় ছাড়ছি।
মেজোরানী বললে, এই সকালবেলাতেই ছােটোরানীর সাজ হচ্ছে। অবাক করলে। আজ বুঝি ওদের বন্দে মাতরমের বৈঠক বসবে। ওলাে, ও দেবীচৌধুরানী, লুটের মাল বােঝাই হচ্ছে নাকি?
আর-একটু পরে এসে সব ঠিক করা যাবে, এই বলে বাইরে এসে দেখি সেখানে পুলিস ইন্স্পেক্টর এসে উপস্থিত। জিজ্ঞাসা করলুম, কিছু সন্ধান পেলেন?
সন্দেহ তাে করছি।
কাকে?
ঐ কাসেম সর্দারকে।
সে কী কথা! ঐ তাে জখম হয়েছে।
জখম কিছু নয়। পায়ের চামড়া ঘেঁষে একটুখানি রক্ত পড়েছে; সে ওর নিজেরই কীর্তি।
কাসেমকে আমি কোনােমতেই সন্দেহ করতে পারি নে। ও বিশ্বাসী।
বিশ্বাসী সে কথা মানতে রাজি আছি, কিন্তু তাই বলেই যে চুরি করতে পারে না তা বলা যায় না। এও দেখেছি পঁচিশ বৎসর যে-লােক বিশ্বাস রক্ষা করে এসেছে সেও একদিন হঠাৎ—
তা যদি হয় আমি ওকে জেলে দিতে পারব না।
আপনি দেবেন কেন? যার হাতে দেবার ভার সেই দেবে।
কাসেম ছ হাজার টাকা নিয়ে বাকি টাকাটা ফেলে রাখলে কেন?
ঐ ধোঁকাটা মনে জন্ম দেবার জন্যেই। আপনি যাই বলুন, লােকটা পাকা। ও আপনাদের কাছারিতে পাহারা দেয়; এ দিকে কাছাকাছি এ অঞ্চলে যত চুরি ডাকাতি হয়েছে নিশ্চয় তার মূলে ও আছে।