পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৭০
ঘরে-বাইরে

 লাঠিয়ালরা পঁচিশ-ত্রিশ মাইল দূরে ডাকাতি সেরে এক রাত্রেই কেমন করে ফিরে এসে মনিবের কাছারিতে হাজরি লেখাতে পারে ইন্‌স্পেক্টর তার অনেক দৃষ্টান্ত দেখালেন।

 আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কাসেমকে এনেছেন?

 তিনি বললেন, না, সে থানায় আছে। এখনই ডেপুটিবাবু তদন্ত করতে আসবেন।

 আমি বললুম, আমি তাকে দেখতে চাই।

 কাসেমের সঙ্গে দেখা হবামাত্র সে আমার পা জড়িয়ে ধরে কেঁদে বললে, খােদার কসম, মহারাজ, আমি এ কাজ করি নি।

 আমি বললুম, কাসেম, আমি তােমাকে সন্দেহ করি নে। ভয় নেই তােমার, বিনা দোষে তােমার শাস্তি ঘটতে দেব না।

 কাসেম ডাকাতদের ভালাে বর্ণনা করতে পারলে না। কেবল খুবই অত্যুক্তি করতে লাগল— চারশাে, পাঁচশাে লোক, এত বড়াে বড়াে বন্দুক তলােয়ার ইত্যাদি। বুঝলুম, এ-সমস্ত বাজে কথা; হয় ভয়ের দৃষ্টিতে সব বেড়ে উঠেছে, নয় পরাভবের লজ্জা চাপা দেবার জন্যে বাড়িয়ে তুলেছে। ওর ধারণা, হরিশ কুণ্ডুর সঙ্গে আমার শত্রুতা, এ তারই কাজ; এমন-কি, তাদের এক্রাম সর্দারের গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে বলে তার বিশ্বাস।

 আমি বললুম, দেখ কাসেম, আন্দাজের উপর ভর করে খবরদার পরের নাম জড়াস নে। হরিশ কুণ্ডু এর মধ্যে আছে কি না সে কথা বানিয়ে তােলবার ভার তাের উপর নেই।

 বাড়ি ফিরে এসে মাস্টারমশায়কে ডেকে পাঠালুম। তিনি মাথা নেড়ে বললেন, আর কল্যাণ নেই। ধর্মকে সরিয়ে দিয়ে দেশকে তার জায়গায় বসিয়েছি; এখন দেশের সমস্ত পাপ উদ্ধত হয়ে ফুটে বেরােবে, তার আর কোনাে লজ্জা থাকবে না।

 আপনি কি মনে করেন এ কাজ—

 আমি জানি নে, কিন্তু পাপের হাওয়া উঠেছে। দাও দাও, তােমার এলেকা থেকে ওদের এখনই বিদায় করে দাও।

 আর একদিন সময় দিয়েছি। পরশু এরা সব যাবে।

 দেখাে, আমি একটি কথা বলি, বিমলাকে তুমি কলকাতায় নিয়ে যাও। এখান থেকে তিনি বাইরেটাকে সংকীর্ণ করে দেখছেন, সব মানুষের সব জিনিসের ঠিক পরিমাণ বুঝতে পারছেন না। ওঁকে তুমি একবার পৃথিবীটা