পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
ঘরে-বাইরে

মধ্যেই তােমার বন্দনা সকলের চেয়ে বড়াে হয়ে উঠল। দেবী, আমিও আজ তােমাকে মুক্তি দিলুম। আমার মাটির মন্দিরে তােমাকে ধরছিল না, এ মন্দির প্রত্যেক পলকে ভাঙবে-ভাঙবে করছিল, আজ তােমার বড়াে মূর্তিকে বড়াে মন্দিরে পূজা করতে চললুম। তােমার কাছ থেকে দূরেই তােমাকে সত্য করে পাব। এখানে তােমার কাছ থেকে প্রশ্রয় পেয়েছিলুম, সেখানে তােমার কাছ থেকে বর পাব।

 টেবিলের উপর আমার গয়নার বাক্স ছিল। আমি সেটা তুলে ধরে বললুম, আমার এই গয়না আমি তােমার হাত দিয়ে যাঁকে দিলুম তাঁর চরণে তুমি পৌছে দিয়ো।

 আমার স্বামী চুপ করে রইলেন। সন্দীপ বেরিয়ে চলে গেল।


অমূল্যের জন্যে নিজের হাতে খাবার তৈরি করতে বসেছিলুম, এমন সময় মেজোরানী এসে বললেন, কী লাে ছুটু, নিজের জন্মতিথিতে নিজেকেই খাওয়াবার উজ্জুগ হচ্ছে বুঝি?

 আমি বললুম, নিজেকে ছাড়া আর-কাউকে খাওয়াবার নেই নাকি?

 মেজোরানী বললেন, আজ তাে তাের খাওয়াবার কথা নয়, আমরা খাওয়াব। সেই জোগাড়ও তাে করছিলুম, এমন সময় খবর শুনে পিলে চমকে গেছে আমাদের কোন্ কাছারিতে নাকি পাঁচ-ছ শাে ডাকাত পড়ে ছ হাজার টাকা লুটে নিয়েছে। লােকে বলছে, এইবার তারা আমাদের বাড়ি লুট করতে আসবে।

 এই খবর শুনে আমার মনটা হালকা হল। এ তবে আমাদেরই টাকা! এখনই অমূল্যকে ডাকিয়ে বলি, এই ছ হাজার টাকা এইখানেই আমার সামনে আমার স্বামীর হাতে সে ফিরিয়ে দিক, তার পরে আমার যা বলবার সে আমি তাঁকে বলব।

 মেজোরানী আমার মুখের ভাব লক্ষ্য করে বললেন, অবাক করলে! তাের মনে একটুও ভয়-ডর নেই?

 আমি বললুম, আমাদের বাড়ি লুট করতে আসবে এ আমি বিশ্বাস করতে পারি নে।

 বিশ্বাস করতে পার না? কাছারি লুট করবে এইটেই বা বিশ্বাস করতে কে পারত?

 কোনাে জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে পুলিপিঠের মধ্যে নারকেলের পুর দিতে লাগলুম। আমার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে তিনি বললেন, যাই,