পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঘরে-বাইরে
১৯৭

 কোথা থেকে বেরােল?

 আপাতত অমূল্যবাবুর হাত থেকে। উনি কাল রাত্রে আপনার চকুয়া কাছারির নায়েবের কাছে গিয়ে বললেন, চোরাই নােট পাওয়া গেছে। চুরি যেতে নায়েব এত ভয় পায় যেমন এই চোরাই মাল ফিরে পেয়ে। তার ভয় হল সবাই সন্দেহ করবে, এ নােট সেই লুকিয়ে রেখেছিল, এখন বিপদের সম্ভাবনা দেখে একটা অসম্ভব গল্প বানিয়ে তুলেছে। সে অমূল্যবাবুকে খাওয়াবার ছল করে বসিয়ে রেখেই থানায় খবর দিয়েছে। আমি ঘােড়ায় চড়ে গিয়েই ভাের থেকে ওঁকে নিয়ে পড়েছি। উনি বললেন, কোথা থেকে পেয়েছি সে আপনাকে বলব না। আমি বললুম, না বললে আপনি তাে ছাড় পাবেন না। উনি বললেন, মিথ্যে বলব। আমি বলি, আচ্ছা, তাই বলুন। উনি বলেন, ঝােপের মধ্যে থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি। আমি বললুম, মিথ্যে কথা অত সহজ নয়; কোথায় ঝােপ, সেই ঝােপের মধ্যে আপনি কী দরকারে গিয়েছিলেন, সমস্ত বলা চাই। উনি বললেন, সে-সমস্ত বানিয়ে তােলবার আমি যথেষ্ট সময় পাব, সেজন্যে কিছু চিন্তা করবেন না।

 আমি বললুম, হরিচরণবাবু, ভদ্রলােকের ছেলেকে নিয়ে মিছিমিছি টানাটানি করে কী হবে?

 দারােগা বললেন, শুধু ভদ্রলােকের ছেলে নয়, উনি নিবারণ ঘােষালের ছেলে; তিনি আমার ক্লাস-ফ্রেণ্ড ছিলেন। মহারাজ, আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি ব্যাপারখানা কী। অমূল্য জানতে পেরেছেন কে চুরি করেছে, এই বন্দে মাতরমের হুজুক উপলক্ষে তাকে উনি চেনেন। নিজের ঘাড়ে দায় নিয়ে তাকে উনি বাঁচাতে চান। এই-সব হচ্ছে ওঁর বীরত্ব। বাবা, আমাদেরও বয়েস একদিন তােমাদেরই মতাে ঐ আঠারাে-উনিশ ছিল, পড়তুম রিপন কলেজে; একদিন স্ট্যাণ্ডে একটা গােরুর গাড়ির গাড়ােয়ানকে পাহারাওয়ালার জুলুম থেকে বাঁচাবার জন্যে প্রায় জেলখানার সদর-দরজার দিকে ঝুঁকেছিলুম, দৈবাৎ ফসকে গেছে।— মহারাজ, এখন চোর ধরা পড়া শক্ত হল, কিন্তু আমি বলে রাখছি কে এর মূলে আছে।

 আমি জিজ্ঞাসা করলুম, কে?

 আপনার নায়েব তিনকড়ি দত্ত আর ঐ কাসেম সর্দার।

 দারােগা তাঁর এই অনুমানের পক্ষে নানা যুক্তি দেখিয়ে যখন চলে গেলেন আমি অমূল্যকে বললুম, টাকাটা কে নিয়েছিল আমাকে যদি বল কারাে কোনাে ক্ষতি হবে না।

 সে বললে, আমি।