কেমন করে? ওরা যে বলে ডাকাতের দল—
আমি একলা।
অমূল্য যা বললে সে অদ্ভুত। নায়েব রাত্রে আহার সেরে বাইরে বসে আঁচাচ্ছিল, সে জায়গাটা ছিল অন্ধকার। অমূল্যর দুই পকেটে দুই পিস্তল, একটাতে ফাঁকা টোটা, আর-একটাতে গুলি ভরা। ওর মুখের আধখানাতে ছিল কালাে মুখোেশ। হঠাৎ একটা বুল্স্-আই লণ্ঠনের আলাে নায়েবের মুখে ফেলে পিস্তলের ফাঁকা আওয়াজ করতেই সে হাউমাউ শব্দ করে মূর্ছা গেল। দু-চারজন বরকন্দাজ ছুটে আসতেই তাদের মাথার উপর পিস্তলের আওয়াজ করে দিলে, তারা যে যেখানে পারলে ঘরের মধ্যে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলে। কাসেম সর্দার লাঠি হাতে ছুটে এল, তার লক্ষ্য করে গুলি মারতেই সে বসে পড়ল। তার পরে ঐ নায়েবকে দিয়ে লােহার সিন্দুক খুলিয়ে ছ হাজার টাকার নােটগুলাে নিয়ে আমাদের কাছারির এক ঘােড়া মাইল পাঁচ-ছয় ছুটিয়ে সেই ঘােড়াটাকে এক জায়গায় ছেড়ে দিয়ে পরদিন সকালে আমার এখানে এসে পৌচেছে।
আমি জিজ্ঞাসা করলুম, অমূল্য, এ কাজ কেন করতে গেলে?
সে বললে, আমার বিশেষ দরকার ছিল।
তবে আবার ফিরিয়ে দিলে কেন?
যাঁর হুকুমে আমি ফিরিয়ে দিলুম তাঁকে ডাকুন, তার সামনে আমি বলব।
তিনি কে?
ছােটোরানীদিদি।
বিমলকে ডেকে পাঠালুম। তিনি একখানি সাদা শাল মাথার উপর দিয়ে ফিরিয়ে গা ঢেকে আস্তে আস্তে ঘরের মধ্যে ঢুকলেন, পায়ে জুতােও ছিল না; দেখে আমার মনে হল, বিমলকে এমন যেন আর কখনাে দেখি নি— সকালবেলাকার চাঁদের মতাে ও যেন আপনাকে প্রভাতের আলাে দিয়ে ঢেকে এনেছে।
অমূল্য বিমলের পায়ের কাছে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রণাম করে পায়ের ধুলাে নিলে। উঠে দাঁড়িয়ে বললে, তােমার আদেশ পালন করে এসেছি দিদি। টাকা ফিরিয়ে দিয়েছি।
বিমল বললে, বাঁচিয়েছ ভাই!
অমূল্য বললে, তােমাকে স্মরণ করেই একটি মিথ্যা কথাও বলি নি। আমার বন্দে মাতরম্ মন্ত্র রইল তােমার পায়ের তলায়। ফিরে এসে এই বাড়িতে ঢুকেই তােমার প্রসাদও পেয়েছি।