বিমলা এ কথাটা ঠিক বুঝতে পারলে না। অমূল্য পকেট থেকে রুমাল বের করে তার গ্রন্থি খুলে সঞ্চিত পিঠেগুলি দেখালে। বললে, সব খাই নি, কিছু রেখেছি— তুমি নিজের হাতে আমার পাতে তুলে দিয়ে খাওয়াবে বলে। এইগুলি জমানাে আছে।
আমি বুঝলুম, এখানে আর আমার দরকার নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে গেলুম। মনে ভাবলুম, আমি তাে কেবল বকে বকেই মরি, আর ওরা আমার কুশপুত্তলির গলায় ছেঁড়া জুতাের মালা পরিয়ে নদীর ধারে দাহ করে। কাউকে তাে মরার পথ থেকে ফেরাতে পারি নে— যে পারে সে ইঙ্গিতেই পারে। আমাদের বাণীতে সেই অমােঘ ইঙ্গিত নেই। আমরা শিখা নই, আমরা অঙ্গার, আমরা নিবােনো, আমরা দীপ জ্বালাতে পারব না। আমার জীবনের ইতিহাসে সেই কথাটাই প্রমাণ হল, আমার সাজানাে বাতি জ্বলল না।
আবার আস্তে আস্তে অন্তঃপুরে গেলুম। বােধ হয়, আর-একবার মেজোরানীর ঘরের দিকে আমার মনটা ছুটল। আমার জীবনও এ-সংসারে কোনাে-একটা জীবনের বীণায় সত্য এবং স্পষ্ট আঘাত দিয়েছে, এটা অনুভব করা আজ আমার যে বড়াে দরকার। নিজের অস্তিত্বের পরিচয় তাে নিজের মধ্যে পাওয়া যায় না, বাইরে আর-কোথাও যে তার খোঁজ করতে হয়।
মেজোরানীর ঘরের সামনে আসতেই তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, এই-যে ঠাকুরপাে, আমি বলি, বুঝি তােমার আজও দেরি হয়। আর দেরি নেই, তােমার খাবার তৈরি রয়েছে, এখনই আসছে।
আমি বললুম, ততক্ষণ সেই টাকাটা বের করে ঠিক করে রাখি।
আমার শােবার ঘরের দিকে যেতে যেতে মেজোরানী জিজ্ঞাসা করলেন, দারােগা যে এল, সেই চুরির কোনাে আশকারা হল নাকি?
সেই ছ হাজার টাকা ফিরে পাবার ব্যাপারটা মেজোরানীর কাছে আমার বলতে ইচ্ছে হল না। আমি বললুম, সেই নিয়েই তাে চলছে।
লােহার সিন্দুকের ঘরে গিয়ে পকেট থেকে চাবির গােছা বের করে দেখি, সিন্দুকের চাবিটাই নেই। অদ্ভুত আমার অন্যমনস্কতা! এই চাবির রিঙ নিয়ে আজ সকাল থেকে কতবার কত বাক্স খুলেছি, আলমারি খুলেছি, কিন্তু একবারও লক্ষই করি নি যে চাবিটা নেই।
মেজোরানী বললেন, চাবি কই?
আমি তার জবাব না করে বৃথা এ পকেট ও পকেট নাড়া দিলুম, দশবার করে সমস্ত জিনিসপত্র হাঁটকে খোঁজাখুঁজি করলুম। আমাদের বােঝবার বাকি