পাতা:ঘরে-বাইরে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (২০১৯).pdf/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘরে-বাইরে ১৩২২ সালের সবুজ পত্রে ধারাবাহিকভাবে মুদ্রিত ও ১৩২৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ-কালে সবুজ পত্রে-মুদ্রিত বহু অংশ বর্জিত হইলেও পরবর্তী ১৯২০ খৃস্টাব্দের পরিবর্ধিত সংস্করণে সে-সমস্তই পুনরায় গৃহীত হইয়াছে। বর্তমান মুদ্রণ উক্ত পরিবর্ধিত সংস্করণের পুনর্মুদ্রণ এবং সবুজ পত্রের পাঠের সহিত অভিন্ন। উপন্যাসখানি যখন সাময়িকপত্রে ধারাবাহিক প্রকাশিত হইতেছিল তখনই ইহার নানারূপ বিরুদ্ধ সমালােচনা হইতে থাকে। ঘরে-বাইরে সম্বন্ধে একখানি চিঠির উত্তরে রবীন্দ্রনাথ ১৩২২ সালের অগ্রহায়ণের সবুজ পত্রে যে ‘টীকাটিপ্পনি’ লিখিয়াছিলেন তাহা নিম্নে মুদ্রিত হইল—

লেখার উদ্দেশ্য

আমি যা লিখে থাকি তা অনেকের ভালাে লাগে না। এই কথাটি আমাকে সাধারণত যে ভাষায় বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা হয় নানা স্বাভাবিক কারণে সে ভাষায় আমার দখল নেই। এইজন্য যথারীতি তার জবাব দেওয়া আমার পক্ষে অসাধ্য।

 এমন অবস্থায় হঠাৎ একখানি চিঠি পেলুম, সেই চিঠিতে অভিযােগ আছে কিন্তু অবমাননা নেই। চিঠিখানি কোনাে মহিলার লেখা, তিনি আমার অপরিচিত। এই চিঠিতে তাঁর স্ত্রীজনােচিত সংযম ও সৌজন্য এবং মাতৃজনােচিত করুণা প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি দুঃখবােধ করেছেন, কিন্তু দুঃখ দিতে চান নি।

 তিনি নিজের কোনাে ঠিকানা দেন নি, অথচ কয়েকটি প্রশ্ন করেছেন, এর থেকেই অনুমান করছি যে, এই প্রশ্ন তিনি সাধারণের হয়ে পাঠিয়েছেন এবং সাধারণের ঠিকানাতেই এর জবাব চান।

 অতএব তাঁর ভর্ৎসনার উত্তরে যে-ক’টি কথা বলবার আছে সে আমি এই সবুজ পত্র -যােগে তাঁর কাছে সবিনয়ে নিবেদন করি। এই উপলক্ষে সাধারণত আমাদের দেশে যে ভাবে সাহিত্যবিচার হয়ে থাকে প্রসঙ্গত সে সম্বন্ধেও কিছু আলােচনা করব।

 প্রথমত তিনি কিছু ক্ষোভের সঙ্গেই জিজ্ঞাসা করেছেন— ঘরে-বাইরে উপন্যাসখানি লেখবার উদ্দেশ্য কী?

 এর সত্য উত্তরটি এই যে, উপন্যাস লেখার উদ্দেশ্যই উপন্যাস লেখা। সাদা কথায়, গল্প লিখব আমার খুশি!

 কিন্তু একে উদ্দেশ্য বলা যায় না। কেননা ‘খুশি’ বলাই উদ্দেশ্যকে অস্বীকার