আর্টিস্টের দোষ। কিন্তু দোষটা মত-বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে না। প্রদীপ ইংরেজের একরকম, এবং ডীট্জ্ লণ্ঠন চলিত হবার পূর্বে হিন্দুর অন্যরকম ছিল, তবু আলাে জিনিসটা আলােই।
দেশের হিতাহিত সম্বন্ধে আমার সঙ্গে পাঠকের মতভেদ থাকা সম্ভব; কিন্তু গল্পকে মত বলে দেখবার তাে দরকার নেই, গল্প বলেই দেখতে হবে।
গল্পের খাতির
কিন্তু মত যখন এমন বিষয় নিয়ে যেটা দেশের একেবারে মর্মের কথা তখন পাঠকের কাছ থেকেও অতটা বেশি নিরাসক্তর সহানুভূতি দাবি করা যায় না। তখন পাঠকের নিজের ব্যথা গল্পের ব্যথাকে ছাড়িয়ে ওঠে। অতএব সে জায়গায় রসের বিচারের চেয়ে রসের বিষয়বিচারটা স্বভাবতই বড়াে না হয়ে থাকতে পারে না।
আচ্ছা বেশ, তাই মানলুম। তা হলে এ স্থলে লেখকের প্রতি উপদেশটা কী? নিজে যেটাকে ভালাে মনে করি পাঠকের খাতিরে চেষ্টা করব সেটাকে মন্দ মনে করতে? পাঠক যদি গল্পের খাতিরে সে কাজ করতে না পারেন তা হলে লেখকই বা পাঠকের খাতিরে এমন কাজ কী করে করবেন?
বস্তুত খাতিরটা গল্পের, লেখকেরও নয়, পাঠকেরও নয়। সেই গল্পের খাতিরেই নিজের হৃদয়ভার সম্বন্ধে লেখককে নিজের হৃদয় অনুসরণ করতে হবেই এবং সেই গল্পের খাতিরেই পাঠককে গল্পের রস অনুসরণ করতে হবে।
যদি বলা যায় গল্পের খাতিরের চেয়ে দেশের খাতির বড়াে, তবে সে কথা পাঠক সম্বন্ধেও যেমন খাটে লেখক সম্বন্ধেও তেমনি। তাঁর সাময়িক একদল পাঠক তাঁকে বাহবা দেবে, এ কথা লেখকের ভাববার নয়; তিনি ভাববেন, তাঁর গল্পটি ঠিকমত হওয়া চাই; তাও যদি তাঁকে ভাবতে দেওয়া না যায় তবে দেশের ভালাে হয় এই কথাই যেন তিনি ভাবেন, দেশ তাঁকে ভালাে বলে এ কথা নয়।
আখ্যায়িকা
লেখিকার দ্বিতীয় প্রশ্ন এই যে, এই উপন্যাসের আখ্যায়িকা কি আমার কল্পনাপ্রসূত, না বাস্তবে কোথাও তার আভাস পাওয়া গেছে। যদি পেয়ে থাকি তবে সে কি আধুনিক ‘পাশ্চাত্যশিক্ষাভিমানী বিলাসী-সম্প্রদায়ে না প্রাচীন হিন্দুপরিবারে?’