নিখিলকে বললুম, তােমার সঙ্গে কথা হল ভালােই হল। আমি আর একটু হলেই এ বইটা মক্ষীরানীকে পড়তে দিচ্ছিলুম।
নিখিল বললে, তাতে ক্ষতি কী? ও বই যখন আমি পড়েছি তখন বিমলই বা পড়বে না কেন? আমার কেবল একটি কথা বুঝিয়ে বলবার আছে। আজকাল য়ুরােপ মানুষের সব জিনিসকেই বিজ্ঞানের তরফ থেকে যাচাই করছে। এমনিভাবে আলােচনা চলছে যেন মানুষ-পদার্থটা কেবল দেহতত্ত্ব, কিংবা জীবতত্ত্ব, কিংবা মনস্তত্ত্ব, কিংবা বড় জোর সমাজতত্ত্ব। কিন্তু মানুষ যে তত্ত্ব নয়, মানুষ যে সব তত্ত্বকে নিয়ে সব তত্ত্বকে ছাড়িয়ে অসীমের দিকে আপনাকে মেলে দিচ্ছে, দোহাই তােমাদের, সে কথা ভুলাে না। তােমরা আমাকে বল, আমি ইস্কুল-মাস্টারের ছাত্র। আমি নই, সে তােমরা— মানুষকে তােমরা সায়ান্সের মাস্টারের কাছ থেকে চিনতে চাও, তােমাদের অন্তরাত্মার কাছ থেকে নয়।
আমি বললুম, নিখিল, আজকাল তুমি এমন উত্তেজিত হয়ে আছ কেন?
সে বললে, আমি যে স্পষ্ট দেখছি, তােমরা মানুষকে ছােটো করছ, অপমান করছ।
কোথায় দেখছ?
হাওয়ার মধ্যে, আমার বেদনার মধ্যে। মানুষের মধ্যে যিনি সব চেয়ে বড়াে, যিনি তাপস, যিনি সুন্দর, তাকে তােমরা কাঁদিয়ে মারতে চাও!
এ কী তােমার পাগলামির কথা!
নিখিল হঠাৎ দাঁড়িয়ে উঠে বললে, দেখাে সন্দীপ, মানুষ মরণাস্তিক দুঃখ পাবে ঠিক তবু মরবে না এই বিশ্বাস আমার দৃঢ় আছে, তাই আমি সব সইতে প্রস্তুত হয়েছি— জেনেশুনে, বুঝেসুঝে।
এই কথা বলেই সে ঘরের থেকে বেরিয়ে চলে গেল। আমি অবাক হয়ে তার এই কাণ্ড দেখছি, এমন সময় হঠাৎ একটা শব্দ শুনে দেখি টেবিলের উপর থেকে দুটো-তিনটে বই মেঝের উপর পড়ল, আর মক্ষীরানী ত্রস্তপদে আমার থেকে যেন একটু দূর দিয়ে চলে গেল।
অদ্ভুত মানুষ ঐ নিখিলেশ। ও বেশ বুঝেছে, ওর ঘরের মধ্যে একটা বিপদ ঘনিয়ে এসেছে। কিন্তু তবু আমাকে ঘাড় ধরে বিদায় করে দেয় না কেন? আমি জানি, ও অপেক্ষা করে আছে বিমল কী করে। বিমল যদি ওকে বলে, তােমার সঙ্গে আমার জোড় মেলে নি, তবেই ও মাথা হেঁট করে মৃদুস্বরে বলবে, তা হলে দেখছি ভুল হয়ে গেছে। ভুলকে ভুল বলে মানলেই সব