নকল করি নি। তাঁরা কিছুতেই মানতে চান না। আমাদের মন গেল খারাপ হয়ে। রবিকাকা বললেন, দরকার নেই আর ড্রামাটিক ক্লাবের, এ তুলে দাও। পরের প্লে ‘বিসর্জন’ হবে, সব ঠিক, পার্ট আমাদের মুখস্থ, সিন আঁকা হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ড্রামাটিক ক্লাব তুলে দেওয়া হল। ড্রামাটিক ক্লাব তো উঠে গেল, রেখে গেল কিছু টাকা। আমাদের তখন এই-সব কারণে মন খারাপ হয়ে আছে; আমি বললুম সেই টাকা দিয়ে ভোজ লাগাও। হল ড্রামাটিক ক্লাবের শ্রাদ্ধ, রীতিমত ভোজের আয়োজন, সে-সব গল্প তো তোমাকে আগেই বলেছি। এই হল ড্রামাটিক ক্লাবের জন্মমৃত্যুর ইতিহাস।
তার পর মেজোজ্যাঠামশায়ের পার্টি, আমরা ‘রাজা ও রানী’ অভিনয় করেছিলুম। আর কী খাওয়ার ধুম এক মাস ধরে। পার্ট সব তৈরি হয়ে গেছে, তবু আমরা রিহার্সেল বন্ধ করছি না খাওয়ার লোভে। আমি তখন খাইয়ে ছিলুম খুব। বিকেলের চা থেকে খাওয়া শুরু হত, রাত্রের ডিনার পর্যন্ত খাওয়া চলত আমাদের, আর সঙ্গে সঙ্গে রিহার্সেলও চলত। দেবদত্ত সেজেছিলেন মেজোজ্যাঠামশায়, সুমিত্রা মেজোজ্যাঠাইমা, রাজা রবিকাকা, ত্রিবেদী অক্ষয় মজুমদার, কুমার প্রমথ চৌধুরী, ইলা প্রিয়ম্বদা, সেনাপতি নিতুদা—যেমনি লম্বা চওড়া ছিলেন স্টেজে ঢুকলে মনে হত যেন মাথায় ঠেকে যাবে। আর, আমরা অনেকেই ছোটোখাটো পার্ট নিয়েছিলুম জনতা, সৈন্য, নাগরিক, এই সবের। আমার ছয়-ছয়টা পার্ট ছিল তাতে। মেজোজ্যাঠাইমা ডিমেতে ব্রাণ্ডিতে ফেটিয়ে এগ্ ফ্লিপ তৈরি করে রাখতেন খাবার জন্য, পাছে আমাদের গলা ভেঙে যায়। আমার দরকার হত না এগ্ ফ্লিপ খাবার, অরুদার থেকে থেকেই গলা খুস খুস করত। বলতেন, অবন, গলাটা কেমন করছে, আর ঘুরে ফিরে কেবল এগ্ ফ্লিপই খাচ্ছেন।
গাড়িবারান্দায় স্টেজ বাঁধা হল। এক রাত্তিরে ড্রেস রিহার্সেল হচ্ছে, ঘরের লোকই সব জমা হয়েছে। পরের দিন অভিনয় হবে। মেজোজ্যাঠামশায়ের মেজাজ তো, মুখে যা আসত টপাস করে বলে
১০৪