পাতা:ঘরোয়া.djvu/১২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পদ্মবন, শোলার পদ্মফুল, পদ্মপাতা বানিয়ে নেটের মতো পাতলা গজের পর্দা পর-পর চার-পাঁচটা স্তরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। প্রথমটা বেশ ঝাপসা কুয়াশার মতো দেখাবে, পরে এক-একটা পর্দা উঠে যাবে, ওপাশ থেকে আস্তে আস্তে আলো ফুটবে আর একটু একটু করে পদ্মবনে সরস্বতী ক্রমশ প্রকাশ পাবে।

 তখন এ-রকম ইলেকট্রিক বাতি ছিল না, গ্যাস বাতি, কার্বন লাইটের ব্যবস্থা হল। লাল সবুজ মখমলের পর্দা দিয়ে স্টেজ সাজানো হল। এটা সেটা কিছুই বাদ নেই। কর্তাদাদামশায়ের খরচ—মনের সুখে জিনিসপত্তর আনিয়ে সাজানো গোছানো গেছে।

 ও দিকে আবার বিরাট পার্টি। লাটসাহেবের মেম, দেদার সাহেব-সুবো ও বড়ো বড়ো মান্যগণ্য লোক সবাইকে নেমন্তন্ন করা হয়েছে। নীচে স্টেজ, উপরে দোতলার ছাদে ‘সাপার’ হবে, কত রকমের খাবারের আয়োজন, বরফের পাহাড় হয়ে গেছে। মেজোজ্যাঠামশায়, জ্যোতিকাকা, সারদা পিসেমশায় তারা সব রইলেন অতিথিদের খাওয়া দেখাশোনার ভার নিয়ে, রবিকাকা রইলেন আমাদের নিয়ে।

 অভিনয়ের দিন এল; সব-কিছু তৈরি, নিতুদা স্টেজ ম্যানেজার, আমাদের সাজসজ্জা তৈরি, কাবুলী ইজের পরা, কোথায়ও না গা দেখা যায়, একেবারে নতুন সাজ। লম্বা জোব্বা-টোব্বা পরে রবিকাকাও তৈরি, গলায় চেনে বাঁধা। শঙ্খ ঝুলছে, শৃঙ্গবাদন করে ডাকাত ডাকবেন, সব ঠিকঠাক। অতিথিঅভ্যাগতরাও এসেছেন সৰ। অভিনয় শুরু করবার সময় হল। আমাদের যে বুক একটু দুরদুর না করেছে এমন নয়। রবিকাকাও যেমন একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েন এ-সব ব্যাপারে, আমাকে বললেন, দেখো তো কেমন লোকজন হয়েছে বাইরে।

 আমি তো কাঁচুমাচু করছি, কী দরকার দেখবার, হয়তে ঘাবড়ে যাব।

 রবিকাকা বলছেন, আঃ, দেখোই না পর্দাটা একটু ফাঁক করে, কী রকম লোকজনের ভিড় হয়েছে দেখো।

১১৮