কেউ আবার উঠতে পারে না দোলনাতে, নেহাত ছোট্টো, তাকে ধরে দোল্নাতে বসিয়ে দিই। খুব নাচ গান দোল এই সব চলছে।
শেষ গান হল ‘আজ সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে’। সেই গানে নানা রঙের আলোতে সকলের একসঙ্গে হুল্লোড় নাচ। আমি ছোটো ছোটো ছেলেগুলোকে কোলে নিয়ে পুঁথিপত্র নস্যির ডিবে হাতে, নামাবলী ঘুরিয়ে নাচতে লাগলুম। মেমসাহেবও নাচছে। রবিকাকার ভয়ে সে বেচারি দেখি স্টেজের সামনে আসছে না, সবার পিছনে পিছনে থাকছে। আমি তার কাছে গিয়ে এক হাতে কোমর জড়িয়ে ধরে স্টেজের সামনে এনে তিন পাক ঘুরিয়ে দিলুম ছেড়ে, মেমসাহেবের কোমর ধরে বল্ নাচ নেচে। অডিয়েন্সের হো হো শব্দের মধ্যে ড্রপসিন পড়ল।
ডাকঘর অভিনয় হবে, স্টেজে দরমার বেড়ার উপর নন্দলাল খুব করে আলপনা আঁকলে। একখানা খড়ের চালাঘর বানানো হল। তক্তায় লাল রঙ, ঘরে কুলুঙ্গি, চৌকাঠের মাথায় লতাপাতা, ঠিক যেখানে যেমনটি দরকার যেন একটি পাড়াগেঁয়ে ঘর। সব তো হল। আমি দেখছি, নন্দলালই সব করলে। সেই নীল পর্দার চাঁদ ডাকঘরেও এল। মাঝে মাঝে আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি বলি বেশ হয়েছে। নন্দলালের সাধ্যমত তো স্টেজকে পাড়াগেঁয়ে ঘর বানালে। তার পর হল আমার ফিনিশিং টাচ।
আমি একটা পিতলের পাখির দাঁড়ও এক পাশে ঝুলিয়ে দেওয়ালুম। নন্দলাল বললে, পাখি?
আমি বললুম, না, পাখি উড়ে গেছে, শুধু দাঁড়টি থাক্।
দেখি দাঁড়টি গল্পের আইডিয়ার সঙ্গে মিলে গেল। সবশেষে বললুম, এবারে এক কাজ করো তো নন্দলাল। যাও, দোকান থেকে একটি খুব রঙচঙে পট নিয়ে এসো তো দেখি। নন্দলাল পট নিয়ে এল। বললুম, এটি উইঙের গায়ে আঠ দিয়ে পট্টি মেরে দাও।
যেমন ওটা দেওয়া, একেবারে ঘরের রূপ খুলে গেল। সত্যিকার পাঁড়াগেয়ে ঘর হল। এতক্ষণ মনে হচ্ছিল যেন সাজানো-গোছানো।
১৩৬