কেউ আর কথা কয় না। অনেকে ছিলেন আমাদের বিশেষ বন্ধু—আমাদের পরিবারের বন্ধু। কিন্তু সবাই গম্ভীর মুখে ঘাড় সোজা করে রইলেন, আমাদের দিকে ফিরে চাইলেন না আর। রবিকাকা চুপ করে রইলেন, কিছু বললেন না। আমরা বলাবলি করলুম একটু চোখ টিপে, রেগেছে, এরা খুব রেগেছে দেখছি। রেগেছে তো রেগেছে, কী আর করা যাবে—আমরা চুপ, সবশেষের বেঞ্চিতে বসে রইলুম। পার্টির শেষে কী একটা অভিনয় ছিল, দিনু সেজেছিল বুদ্ধদেব; তা দেখে বাড়ি ফিরে এলুম। পরে শুনেছি ওঁরা নাকি খুব চটে গিয়েছিলেন, বলেছেন, এ কী রকম ব্যবহার, এ কী অসভ্যতা, লেডিজদের সামনে দেশী সাজে আসা, তার উপর খালি পায়ে, মোজা পর্যন্ত না, ইত্যাদি সব। সেই-যে আমাদের ন্যাশনাল ড্রেস নাম হল, তা আর ঘুচল না। কিছুকাল বাদে দেখি বাইরেও সবাই সেই সাজ ধরতে আরম্ভ করেছে। এমন-কি, বিলেত-ফেরতারা ক্রমে ক্রমে ধুতি পরতে শুরু করলে। আমাদের কালে বিলেত-ফেরতাদের নিয়ম ছিল ধুতি বর্জন করা। আমাদের তো আর-কিছু ছিল না, ছিল কেবল মোজা, তাও সেই যে মোজা বর্জন করলুম আর ধরি নি কখনো। দেখো দিকিনি, এখনো বোধ হয় রবিকাকা মোজা পরেন না। ন্যাশনাল ড্রেস নাম হল কংগ্রেস থেকে। রবিকাকাই বললেন, কংগ্রেসকে ন্যাশনালাইজ করতে হবে। কলকাতায় সেবার কংগ্রেস হয়, দেশ-বিদেশের নেতারা এসেছিলেন অনেকেই। কর্তাদের শখ হল, এইখানেই সেই অতিথি-অভ্যাগতদের একটা পার্টি দিতে হবে। ঠিক হল সবাই ন্যাশনাল ড্রেসে আসবে। আমি বলি, সে কী করে হবে। রবিকাকা বললেন, না, তা হতেই হবে। তিনি নিমন্ত্রণপত্রে ছাপিয়ে দেওয়ালেন: all must come in national dress। তাতে একটা বিষম হৈ-চৈ পড়ে গেল ইঙ্গবঙ্গসমাজের চাঁইদের মধ্যে।
তখনকার সেই স্বদেশী যুগে ঘরে ঘরে চরকা কাটা, তাঁত বোনা, বাড়ির গিন্নি থেকে চাকরবাকর দাসদাসী কেউ বাদ ছিল না। মা দেখি একদিন ঘড়ঘড় করে চরকা কাটতে বসে গেছেন। মার চরকা কাটা
২৭