দিক যেন গম্গম্ করত।
কর্তাদাদামশায়ের নাক ছিল দারুণ। আমরা তাঁর কাছে যেতুম না বড়ো বেশি, তবে কখনো বিশেষ বিশেষ দিনে পেন্নাম করতে যেতে হলে হাত-পা ভালো করে সাবান দিয়ে ধুয়ে, গায় একটু সুগন্ধ দিয়ে, মুখে একটি পান চিবোতে চিবোতে যেতুম। পাছে কোনোরকম তামাক-চুরুটের গন্ধ পান। আমাদের ছিল আবার তামাক খাওয়া অভ্যেস। একবার কী হয়েছে, পার্কস্ট্রীটের বাড়িতে বাপ-ছেলেতে আছেন—উপরের তলায় থাকেন কর্তাদাদামশায়, নীচের তলায় বড়ো ছেলে দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। বড়োজ্যাঠামশায় তখন পাইপ খেতেন। একদিন বড়োজ্যাঠামশায় নীচের তলায় চানের ঘরে পাইপ টানছেন। উপরের ঘরে ছিলেন কর্তাদাদামশায় শুয়ে, চেঁচিয়ে উঠলেন, এ-ই! চাকর-বাকরের নাম ধরে কখনো ডাকতেন না, ‘এ-ই’ বলে ডাকলেই সব ছুটে যেত। তিনি বললেন, গাঁজা খাচ্ছে কে। চাকররা তো ছুটোছুটি করতে লাগল বাড়িময়, খোঁজ খোঁজ, শেষে দেখে বড়োজ্যাঠামশায়ের ঘর থেকে গন্ধ বেরচ্ছে। এ দিকে বড়োজ্যাঠামশায় তো এই-সব শুনে তক্ষুনি জানলা দিয়ে পাইপ-তামাক সব ছুঁড়ে একেবারে বাইরে ফেলে দিলেন। কর্তাদাদামশায় যখন খবর পেলেন, বললেন, দ্বিজেন্দর তামাক খাবেন, তা খান-না, তবে পাইপ-টাইপ কেন। ভালো তামাক আনিয়ে দাও।
কর্তাদাদামশায় মহর্ষি হলে কী হবে—এদিকে শৌখিন ছিলেন খুব। কোথাও একটু নোংরা সইতে পারতেন না। সব-কিছু পরিষ্কার হওয়া চাই। কিছুদিন বাদে-বাদেই তিনি ব্যবহারের কাপড়-জামা ফেলে দিতেন, চাকররা সেগুলো পরত। কর্তাদাদামশায়ের চাকরদের যা সাজের ঘটা ছিল—একেবারে ধোপ-দোরস্ত সব সাজ।
কর্তাদাদামশায় কখনো এই বৃদ্ধকালেও তোয়ালে দিয়ে গা রগড়াতেন না, চামড়ায় লাগবে। সেজন্য মসলিনের থান আসত, রাখা থাকত আলমারির উপরে, তাই থেকে কেটে কেটে দেওয়া হত, তারই টুকরো দিয়ে তিনি গা রগড়াতেন, চোখ পরিষ্কার করতেন। চাকররা কত সময়ে
৪২