এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই মসলিন চুরি করে নিয়ে নিজেদের জামা করত। দীপুদা বলতেন, এই বেটারাই হচ্ছে কর্তাদাদামশায়ের নাতি, কেমন মসলিনের জামা পরে ঘুরে বেড়ায়, আমরা এক টুকরোও মসলিন পাই না—আমরা কর্তাদাদামশায়ের নাতি কী আবার। দেখছিস না চাকর-বেটাদের সাজের বাহার?

 ঈশ্বরবাবু গল্প করতেন, একবার কর্তামশায়ের শখ হল, কল্পতরু হব। রব পড়ে গেল বাড়িতে, কর্তাদাদামশায় কল্পতরু হবেন। কল্পতরু আবার কী। কী ব্যাপার। সারা বাড়ির লোক এসে ওঁর সামনে জড়ো হল। উনি বললেন, ঘর থেকে যার যা ইচ্ছে নিয়ে যাও। কেউ নিলে ঘড়ি, কেউ নিলে আয়না, কেউ নিলে টেবিল— যে যা পারলে নিয়ে যেতে লাগল। দেখতে দেখতে ঘর খালি হয়ে গেল। সবাই চলে গেল। ঈশ্বরবাবু বললেন, বুঝলে ভাই, তোমার কর্তাদাদামশায় তো কল্পতরু হয়ে খালি ঘরে এক বেতের চৌকির উপর বসে রইলেন।



 এ তো গেল শোনা গল্প। এইবারে শোনো কর্তাদাদামশায়ের গল্প যা আমাদের আমলের।

 তার পর থেকে বরাবর কর্তাদাদামশায় ঐ বেতের চৌকিতেই বসতেন। আমরাও দেখেছি তিনি সোজা হয়ে বেতের চৌকিতে বসে আছেন। পায়ের কাছে একটি মোড়া, কখনো কখনো পা রাখতেন তার উপরে। আর পাশে থাকত একটা তেপায়া— তার উপরে একখানি হাফেজের কবিতা, এই বইখানি পড়তে উনি খুব ভালোবাসতেন—আর একখানি ব্রাহ্মধর্ম। কর্তাদাদামশায়ের পাশে একটি ছোটো পিরিচে থাকত কিছু ফুল—কখনো কয়েকটি বেলফুল, কখনো জুঁই, কখনো শিউলি—গোলাপ বা অন্য ফুল নয়—ঐ রকমের শুভ্র কয়েকটি ফুল, উনি বলতেন গন্ধপুষ্প। বড়োপিসিমা রোজ সকালে কিছু ফুল পিরিচে করে তাঁর পাশে রেখে যেতেন। আর থাকত একখানি পরিষ্কার ধোপদোরস্ত রুমাল। যখন শরবত বা কিছু খেতেন, খেয়ে ঐ রুমাল দিয়ে

৪৩