এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মুখ মুছে নীচে ফেলে দিতেন—চাকররা তুলে নিত কাচবার জন্য, আবার আর-একখানা পরিষ্কার রুমাল এনে পাশে রেখে দিত। আমরা যেমন রুমাল দিয়ে মুখ মুছে আবার পকেটে রেখে দিই, তাঁর তা হবার উপায় ছিল না, ফি বারেই পরিষ্কার রুমাল দিয়ে মুখ মুছতেন। আর থাকত দু পাশে খানকয়েক চেয়ার অভ্যাগতদের জন্য। আরাম করে গা এলিয়ে দিয়ে বিশ্রাম করতে বা কৌচে বসতে কখনো তাকে আমরা দেখি নি, রবিকাকাও বোধ হয় তাকে কখনো কৌচে বসতে দেখেন নি। তবে আমি শুধু একবার দেখেছিলুম—সে অনেক আগের কথা, তখন তার প্রৌঢ় অবস্থা, বাইরে বাইরেই বেশি ঘুরতেন, মাঝে মাঝে যখন আসতেন তখন দক্ষিণ দিকের ঐপাশের দোতলায়ই তিনি থাকতেন। আমাদের এ পাশের পুবের জানলা দিয়ে মুখ বের করে দেখা সাহসে কুলোত না, শরীরের মাপও খড়খড়ি ছাড়িয়ে মাথা উঠত না, একদিন জানালার খড়খড়ির ভিতর দিয়ে দেখি—খাওয়াদাওয়ার পর কর্তাদাদামশায় বসেছেন কৌচে—হরকরা কিনুসিং এসে গড়গড়া দিয়ে গেল। কর্তাদাদামশায়ের তখন কালো দাড়ি গালের দু পাশ দিয়ে তোলা। মসলিনের জামার ভিতর দিয়ে গায়ের গোলাপী আভা ফুটে বেরুচ্ছে। মস্ত একটি আলবোলা, টানলেই তার বুল্‌বুল্‌ বুল্‌বুল্‌ শব্দ আমরা এ বাড়ি থেকেও শুনতে পেতুম। ঐ একবার আমি দেখেছিলুম ওঁকে কৌচে-বসা অবস্থায়।

 একটা ছবি ছিল তাঁর, বোধ হয় এখনো আছে রথীর কাছে—কালো দাড়ি ঐ ছবিতে ছিল, গায়ে বেশ দামি শাল, তখনকার কথা অন্য রকম। এই দাড়ির আবার মজার গল্প আছে, এই গল্প ঈশ্বরবাবুর কাছে শুনেছি আমরা। ঈশ্বরবাবু বলতেন, জানো ভাই, কর্তামশায়ের দাড়ির ইতিহাস? জানো কোত্থেকে এই দাড়ির উৎপত্তি? এই, এই আমি, আমার দেখাদেখি কর্তামশায় দাড়ি রাখলেন।

 সে কী রকম।

 তোমার দাদামশায় নববাবুবিলাস যাত্রা করাবেন, বাড়ির আত্মীয়-

৪৪