জিনিস দুটো, অনেকদিন ছিল আমার কাছেই। তা, ঐ বাটিটিতে উনি শেষকাল পর্যন্ত রোজ দুধ খেতেন। তিনি আমাদের মতো বাটির কানা এক হাতে ধরে দুধ খেতেন না। বড়োপিসিমা দুধের বাটি নিয়ে এলেই অঞ্জলি পেতে দু হাতের মধ্যে বাটিটি নিয়ে মুখে তুলে দুগ্ধ পান করতেন। বাটির নীচে একটা ন্যাপকিন দেওয়া থাকত—যাতে হাতে গরম না লাগে। যখন মেয়ের কাছ থেকে অঞ্জলি পেতে বাটিটি নিতেন কী সুন্দর শোভা হত। তাঁর হাত দুখানিও ছিল বেশ বড়ো বড়ো; তাই হাতের মাপসই বাটি নইলে তার ভালো লাগত না। কর্তাদাদামশায়ের গোরু রোজ গুড় খেত। বড়োপিসিমার উপরেই এই ভার ছিল, রোজ তিনি গোরুকে গুড় খাওয়াতেন। গোরু গুড় খেলে কী হবে? গোরুর দুধ মিষ্টি হবে। দীপুদা বলতেন, দেখছিস কাণ্ড, আমরা গুড় খেতে পাই নে একটু লুচির সঙ্গে, আর কর্তাদাদামশায়ের গোরু দিব্যি কেমন রোজ গাদা গাদা গুড় খাচ্ছে। আমি নাতি হয়ে জন্মেও কিছুই করতে পারলুম না। দীপুদার কথা ছিল সব এমনিই, বেশ রসালো করে কথা বলতেন।
কর্তাদাদামশায় এ দিকে আবার পিটপিটেও ছিলেন খুব। একবার তাঁর শরীর খারাপ হয়েছে, সাহেব ডাক্তার এসেছেন দেখতে, ডাক্তার সণ্ডার্স, তিনি আমাদের ফ্যামিলি ডাক্তার। ডাক্তার এসে তো দেখেশুনে গেলেন। যাবার সময়ে কর্তাদাদামশায়ের সঙ্গে শেকহ্যাণ্ড করে গেলেন যেমন যান বরাবর। কর্তাদাদামশায়ও ‘থ্যাঙ্ক্ ইউ ডাক্তার’ ব’লে হাত বাড়িয়ে দিলেন। এ হচ্ছে দস্তুর, ভদ্রতা, এ বাদ যাবার জো নেই। ডাক্তারও ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন, আমরা দেখি কর্তাদাদামশায়ের হাত আর নামে না। যে হাত দিয়ে শেক্হ্যাণ্ড করেছিলেন সেই হাতখানি টান করে বাইরে ধরে আছেন হাতের পাঁচটা আঙুল ফাঁক করে। দীপুদা বললেন, হল কী। কর্তাদাদামশায়ের হাত আর নামে না কেন, শক-টক লাগল নাকি। চাকররা জানত, তারা তাড়াতাড়ি ফিংগার-বোলে করে জল এনে কর্তাদাদামশায়ের হাতের কাছে এনে
৫২