এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মতো দেখা যাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন লক্‌লকে আগুনের শিখাগুলি তাকে স্পর্শ করতে ভয় পাচ্ছে। তাঁর চার দিকে সেই আগুনের শিখা যেন ঘুরে ঘুরে নেচে বেড়াতে লাগল। দেখতে দেখতে সেই শিখা উপরে উঠতে উঠতে এক সময়ে দপ্‌ করে নিবে গেল, এক নিশ্বাসে সবকিছু মুছে নিলে। ও পারে সূর্য তখন অস্ত গেল।



সেকালের কর্তাদের গল্প শুনলে, এবারে দিদিমাদের গল্প কিছু শোনো।

 আমার নিজের দিদিমা, গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবার, নাম যোগমায়া, তাঁকে আমি চোখে দেখি নি। তাঁর গল্প শুনেছি—মা, বড়োপিসিমা, ছোটোপিসিমা—কাদম্বিনী, কুমুদিনীর কাছে। বড়োপিসিমা বলতেন, আমার মার মতো অমন রূপসী সচরাচর আর দেখা যায় না। কী রঙ, যাকে বলে সোনার বর্ণ। মা জল খেতেন, গলা দিয়ে জল নামত স্পষ্ট যেন দেখা যেত; পাশ দিয়ে চলে গেলে গা দিয়ে যেন পদ্মগন্ধ ছড়াত। দিদিমার কিছু গয়না আমার কাছে আছে এখনো, সিঁথি, হীরে-মুক্তো-দেওয়া কানঝাপটা। মা পেয়েছিলেন দিদিমার কাছ থেকে। দিদিমার একটি সাতনরী হার ছিল, কী সুন্দর, দুগ্‌গো-প্রতিমার গলায় যেমন থাকে সেই ধরনের। মা সেটিকে মাঝে মাঝে সিন্দুক থেকে বের করে আমাদের দেখাতেন; বলতেন, দেখ্‌, আমার শাশুড়ির খোস্‌বো শুঁকে দেখ।

 আমরা হাতে নিয়ে শুঁকে শুঁকে দেখতুম, সত্যিই আতরচন্দনের এমন একটা সুগন্ধ ছিল তাতে। তখনো খোস্‌বো ভুরভুর করছে, সাতনরী হারের সঙ্গে যেন মিশে আছে। সেকালে আতর মাখবার খুব রেওয়াজ ছিল, আর তেমনিই সব আতর। কতকাল তো দিদিমা মারা গেছেন, আমরা তখনো হই নি, এতকাল বাদে তখনো দিদিমায়ের খোস্‌বো তাঁর হারের সোনার ফুলের মধ্যে পেতুম। সেই হারটি মা সুনয়নীকে দিয়েছিলেন। ছোটোপিসিমার বিয়ে দিয়েই দিদিম মারা যান।

৬০