তখনকার মেয়েদের সাজসজ্জার আর-একটা গল্প বলি।
ছোটোদাদামশায়ের আর বিয়ে হয় না। কর্তা দ্বারকানাথ ষোলো বছর বয়সে ছোটোদাদামশায়কে বিলেত নিয়ে যান, সেখানেই তাঁর শিক্ষাদীক্ষা হয়। দ্বারকানাথের ছেলে, বড়ো বড়ো সাহেবের বাড়িতে থেকে একেবারে ঐদেশী কায়দাকানুনে দোরস্ত হয়ে উঠলেন। আর, কী সম্মান সেখানে তাঁর। তিনি ফিরে আসছেন দেশে। ছোটোদাদামশায় সাহেব হয়ে ফিরে আসছেন—কী ভাবে জাহাজ থেকে নামেন সাহেবি সুট প’রে, বন্ধুবান্ধব সবাই গেছেন গঙ্গার ঘাটে তাই দেখতে। তখনকার সাহেবি সাজ জান তো? সে এই রকম ছিল না, সে একটা রাজবেশ—ছবিতে দেখো। জাহাজ তখন লাগত খিদিরপুরের দিকে, সেখান থেকে পানসি করে আসতে হত। সবাই উৎসুক— নগেন্দ্রনাথ কী পোশাকে নামেন। তখনকার দিনের বিলেত-ফেরত, সে এক ব্যাপার। জাহাজঘাটায় ভিড় জমে গেছে।
ধুতি পাঞ্জাবি চাদর গায়ে, পায়ে জরির লপেটা, ছোটোদাদামশায় জাহাজ থেকে নামলেন। সবাই তো অবাক।
ছোটোদাদামশায় তো এলেন। সবাই বিয়ের জন্য চেষ্টাচরিত্তির করছেন, উনি আর রাজি হন না কিছুতেই বিয়ে করতে। তখন সবেমাত্র বিলেত থেকে এসেছেন, ওখানকার মোহ কাটে নি। আমাদের দিদিমাকে বলতেন, বউঠান, ঐ তো একরত্তি মেয়ের সঙ্গে আমার বিয়ে দেবে তোমরা, আর আমার তাকে পালতে হবে, ও-সব আমার দ্বারা হবে না। সবাই বোঝাতে লাগলেন, তিনি আর ঘাড় পাতেন না। শেষে দিদিমা খুব বোঝাতে লাগলেন; বললেন, ঠাকুরপো, সে আমারই বোন, আমি তার দেখাশোনা সব করব—তোমার কিছুটি ভাবতে হবে না, তুমি শুধু বিয়েটুকু করে ফেলো কোনো রকমে।
অনেক সাধ্যসাধনার পর ছোটোদাদামশায় রাজী হলেন।
ছোটোদিদিমা ত্রিপুরাসুন্দরী এলেন।
ছোট্ট মেয়েটি, আমার দিদিমাই তার সব দেখাশোনা করতেন।
৬৭