বেনে-খোঁপা বেঁধে ভালো শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিতেন। বেনে-খোঁপা তিনি চিরকাল বাঁধতেন—আমরাও বড়ো হয়ে তাই দেখেছি, তাঁর মাথায় সেই বেনে-খোপা। কোথায় কী বলতে হবে, কী করতে হবে, সব শিখিয়ে পড়িয়ে দিদিমাই মানুষ করেছেন ছোটোদিদিমাকে।
তখনকার কালে কর্তাদের কাছে, আজকাল এই তোমাদের মতো কোমরে কাপড় জড়িয়ে হলুদের দাগ নিয়ে যাবার জো ছিল না। গিন্নিরা ছোটো থেকে বড়ো অবধি পরিপাটিরূপে সাজ ক’রে, আতর মেখে, সিঁদুর-আলতা প’রে, কনেটি সেজে, ফুলের গোড়ে-মালাটি গলায় দিয়ে তবে ঘরে ঢুকতেন।
আজ সকালে মনে পড়ল একটি গল্প—সেই প্রথম স্বদেশী যুগের সময়কার, কী করে আমরা বাংলা ভাষার প্রচলন করলুম।
ভূমিকম্পের বছর সেটা। প্রোভিন্সিয়াল কন্ফারেন্স হবে নাটোরে। নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ ছিলেন রিসেপশন কমিটির প্রেসিডেণ্ট। আমরা তাঁকে শুধু ‘নাটোর’ বলেই সম্ভাষণ করতুম। নাটোর নেমন্তন্ন করলেন আমাদের বাড়ির সবাইকে। আমাদের বাড়ির সঙ্গে তাঁর ছিল বিশেষ ঘনিষ্ঠতা, আমাদের কাউকে ছাড়বেন না—দীপুদা, আমরা বাড়ির অন্য সব ছেলেরা, সবাই তৈরি হলুম, রবিকাকা তো ছিলেনই। আরো অনেক নেতারা, ন্যাশনাল কংগ্রেসের চাঁইরাও গিয়েছিলেন। ন-পিসেমশায় জানকীনাথ ঘোষাল, ডব্লিউ. সি. বোনার্জি, মেজোজ্যাঠামশায়, লালমোহন ঘোষ— প্রকাণ্ড বক্তা তিনি, বড়ো ভালো লোক ছিলেন, আর কী সুন্দর বলতে পারতেন কিন্তু ঝোঁক ঐ ইংরেজিতে—সুরেন্দ্র বাঁড়ুজ্জে, আরো অনেকে ছিলেন—সবার নাম কি মনে আসছে এখন।
তৈরি তো হলুম সবাই যাবার জন্য। ভাবছি যাওয়া-আসা হাঙ্গাম বড়ো। নাটোর বললেন, কিছু ভাবতে হবে না দাদা।
ব্যবস্থা হয়ে গেল, এখান থেকে স্পেশাল ট্রেন ছাড়বে আমাদের
৬৮