কোথায় গেল গরম গরম সন্দেশ খাওয়া। সেই রাত্রে বাঈজীর নাচ হবার কথা ছিল। নাটোর বলেছিলেন এখানে নাচ দেখে যেতে হবে—সব জোগাড়যন্তোর করা হয়েছিল। চুলোয় যাকগে নাচ, বৈঠকখানা তো ভেঙে চুরমার।
চার দিকে যেন একটা প্রলয়কাণ্ড হয়ে গেছে। সব উৎসাহ আমাদের কোথায় চলে গেল। কলকাতায় মা আর সবাই আমাদের জন্য ভেবে অস্থির, আমরাও করি তাঁদের জন্য ভাবনা। অথচ চলে আসবার উপায় নেই; রেল-লাইন ভেঙে গেছে, নদীর উপরের ব্রিজ ঝুর্ঝুরে অবস্থায়, টেলিগ্রাফের লাইন নষ্ট। তবু কী ভাগ্যিস আমাদের একটি তার কী করে মার কাছে এসে পৌঁচেছিল, ‘আমরা সব ভালো’। আমরাও তাদের একটিমাত্র তার পেলুম যে তাঁরাও সবাই ভালো আছেন। আর-কারো কোনো খবরাখবর করবার বা নেবার উপায় নেই। কী করি, চলে আসবার যখন উপায় নেই থাকতেই হচ্ছে ওখানে। নাটোরকে বললুম, কিন্তু তোমার বৈঠকখানা-ঘরে আর ঢুকছি না। রবিকাকারও দেখি তাই মত, পাকা ছাদের নীচে ঘুমোবার পক্ষপাতী নন। তখনো পাঁচ মিনিট বাদে বাদে সব কেঁপে উঠছে। কখন বাড়িঘর ভেঙে পড়ে ঘাড়ে, মরি আর কি চাপা পড়ে! বললুম, অন্য কোথাও বাইরে জায়গা করে।
নাটোরের একটা কাছারি বাংলো ছিল একটু দূরে, বেশ বড়োই। ভিতরে ঢুকে আগে দেখলুম ছাদটা কিসের—দেখি, না, ভয়ের কিছু নেই, ছাদটি খড়ের, নীচে ক্যান্ভাসের চাঁদোয়া দেওয়া। ভাবলুম যদি চাপা পড়ি, না-হয় ক্যান্ভাস ছিঁড়েফুঁড়ে বের হতে পারব কোনোরকমে। ঠিক হল সেখানেই থাকব, ব্যবস্থাও হয়ে গেল। খাবার জায়গা হল গাড়িবারান্দার নীচে। তেমন কিছু হয় তো চট্ করে বাগানে বেরিয়ে পড়া যাবে সহজেই।
মেজোজ্যাঠামশায় অদ্ভুত লোক। তিনি কিছুতেই মানলেন না; তিনি বললেম, আমি ঐ আমার ঘরেতেই থাকব, আমি কোথাও যাব না।
৭৫