পরদিন খবর পাওয়া গেল, একখানি টেস্ট ট্রেন যাবে কাল। তাতে ‘রিস্ক্’ আছে। ট্রেন নদীর এ পারে আসবে না, নদী পেরিয়ে ও পারে ট্রেন ধরতে হবে। আমরা সবাই যাবার জন্য ব্যস্ত ছিলুম। রবিকাকাও ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, বাড়ির জন্য ওরকম ভাবতে তাঁকে কখনো দেখি নি—মুখে কিছু বলতেন না অবশ্য, তবে খবর পাওয়া গিয়েছিল কলকাতায় বাড়ি দু-এক জায়গায় ধসে গেছে, তাই সবার জন্যে ভাবনায় ছিলেন খুব। আমরাও ভাবছিলুম, তবে জানি মা আছেন বাড়িতে, কাজেই ভয়ের কোনো কারণ নেই। অন্যরাও যাবার জন্যে উদ্গ্রীব হয়ে উঠলেন।
ঘোড়ার গাড়ি একখানি পাওয়া গেল, ঠিকেগাড়ি। তাতে করেই আসতে হবে আমাদের নদীর ব্রিজের কাছ পর্যন্ত। আমরা কয়জন এক গাড়িতে ঠেসাঠেসি করে; দীপুদা উঠে বসলেন ভিতরে, ব্যাপার দেখে আমি একেবারে কোচ-বক্সে চড়ে বসলুম। যাক, সকলে তো নদীতে এসে পৌঁছলুম। এখন নদী পার হতে হবে। দু রকমে নদী পার হওয়া যায়। এক হচ্ছে রেলওয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে; আর হচ্ছে নদীতে জল বেশি ছিল না, হেঁটেই এ পারে চলে আসা। ব্রিজটা ভূমিকম্পে একেবারে ভেঙে পড়ে যায় নি অবশ্য; কিন্তু জায়গায় জায়গায় একেবারে ঝুর্ঝুরে হয়ে গেছে, তার উপর দিয়ে হেঁটে যাবার ভরসা হয় না। আমরা ঠিক করলুম হেঁটেই নদী পার হব। রবিকাকারও তাই ইচ্ছে। চাঁইরা ঘাড় বেঁকিয়ে রইলেন—তাঁরা ঐ ব্রিজের উপর দিয়েই আসবেন। আমরা তো জুতো খুলে বগলদাবা করে, পাজামা হাঁটু অবধি টেনে তুলে, ছপ্ ছপ্ করে নদী পেরিয়ে ও পারে উঠে গেলুম। ও পারে গিয়ে দেখি চাঁইরা তখন দু-এক পা করে এগোচ্ছেন ব্রিজের উপর দিয়ে। রেলগাড়ি যায় যে ব্রিজের উপর দিয়ে তা দেখেছ তো? একখানা করে কাঠ আর মাঝখানে খানিকটা করে ফাঁক। ঝর্ঝরে ব্রিজ, তার পরে ঐ রকম থেকে থেকে ফাঁক—পা কোথায় ফেলতে কোথায় পড়বে। চাঁইরা তো দু-পা এগিয়েই পিছোতে শুরু করলেন। ব্রিজের যা
৭৭