তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি সব জোগাড়-যন্তোর করেছি, শিখিয়েছি, তৈরি করেছি কেমন সব দেখবে’খন।
গেলুম আমরা নবগোপাল মিত্তিরের দেশী সার্কাস পার্টিতে। না গিয়ে পারি? একটা গলিজ জায়গা; গিয়ে দেখি ছোট্ট একখানা তাঁবু ফেলেছে, কয়েকখানা ভাঙা বেঞ্চি ভিতরে, আমরা ও আরো কয়েকজন জানাশোনা ভদ্রলোক বসেছি। সার্কাস শুরু হল। টুকিটাকি দুটো-একটা খেলার পর শেষ হবে ঘোড়ার খেলা দেখিয়ে। দেশী মেয়ে ঘোড়ার খেলা দেখাবে। দেখি কোত্থেকে একটা ঘোড়া হাড়গোড়-বের-করা ধরে আনা হয়েছে, মেয়েও একটি জোগাড় হয়েছে, সেই মেয়েকে সার্কাসের মেমদের মতো টাইট পরিয়ে সাজানো হয়েছে। দেশী মেয়ে ঘোড়ায় চেপে তো খানিক দৌড়ঝাঁপ করে খেলা শেষ করলে। এই হল দেশী সার্কাস।
নবগোপাল মিত্তির ঐ পর্যন্ত করলেন, দেশী সার্কাস খুলে দেশী মেয়েকে দিয়ে ঘোড়ার খেলা দেখালেন। কোথায় হিন্দুমেলা আর কোথায় দেশী সার্কাস। সারা জীবন এই দেশী দেশী করেই গেলেন, নিজের যা-কিছু টাকাকড়ি সব ঐতেই খুইয়ে শেষে ভিক্ষেশিক্ষে করে সার্কাস দেখিয়ে গেলেন।
সেই স্রোত চলল। তার অনেক দিন পরে এলেন রামবাবু। তারও নবগোপাল মিত্তিরের মতোই ন্যাশনাল ধাত ছিল। তিনি এসে বললেন, বেলুনে উড়ব, ওরাই কেবল পারে আর আমরা পারব না?
তার আগেই স্পেন্সার সাহেব, মস্ত বেলুনবাজ, বেলুন দেখিয়ে নাম করে গেছেন।
গোপাল মুখুজ্জের হলেতে থান থান তসর গরদ কেটে বেলুন তৈরি হল, একদিন তিনি উড়লেনও সেই বাঁধা বেলুনে; তার আবার পাল্টা জবাব দিলে সাহেবরা খোলা বেলুনে উড়ে। রামবাবুর রোখ চেপে গেল; তিনি বললেন, আমিও উড়ব খোলা বেলুনে, প্যারাসুট দিয়ে নামব।
৮৪