এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আবার সেই গোপাল মুখুজ্জের হলেই প্যারাসুট বেলুন তৈরি হল। গোপাল মুখুজ্জের অনেক টাকা খরচ হয়েছিল এই-সব করতে। নারকেলডাঙার যেখানে গ্যাস তৈরি হয় সেখান থেকে বেলুন ছাড়া হবে, আমরা অনেকেই সেখানে জড়ো হয়েছি। প্রথম বাঙালি বেলুনে উড়ে প্যারাসুট দিয়ে নামবে, আমাদের মহা উৎসাহ। সব ঠিকঠাক, বেলুন তো উড়ল, তখনো বাঁধা আছে দড়ির সঙ্গে, কথা ছিল রামবাবু রুমাল নাড়লে দড়ি কেটে দেওয়া হবে। খানিকটা উঠে রামবাবু রুমাল নাড়লেন, অমনি খটাস করে দড়ি কেটে দেওয়া হল। বেলুন উপরে উঠছে তো উঠছেই। দেখতে দেখতে বেলুন একেবারে বুঁদ হয়ে গেল। আমরা তো সব স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি, ভাবছি এখনো রামবাবু লাফিয়ে পড়ছেন না কেন। লাখো সাহেবও ছিলেন সেই ভিড়ে—মস্ত সায়েণ্টিস্ট—তিনি বললেন আর নামতে পারবেন না রামবাবু, একেবারে কোল্ড ওয়েভের মধ্যে চলে গেছেন, সেখান থেকে জীবন্ত অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব নয়।

 আমাদের তো সবার মুখ চুন। গোপাল মুখুজ্জের টাকা গেল, বেলুন গেল, আবার রামবাবুও গেলেন দেখছি।

 দুরবীন লাগিয়ে দেখছি; দেখতে দেখতে এক সময়ে দেখলুম, রামবাবু যেন লাফিয়ে পড়লেন বেলুন থেকে। বেলুন তো আরো উপরে উঠে গেল, আর রামবাবু লাফিয়ে পড়ে পাক খেতে লাগলেন কেবলই, প্যারাসুট আর খোলে না। আমরা ভাবছি গেল রে, সব গেল এইবার। শূন্যে পাক খাওয়া মানে বুঝতেই পারো, এক-একবারে পঞ্চাশ-ষাট হাত নেমে আসছেন। এই রকম দু-তিনবার পাক খাবার পর প্যারাসুট খুলল। আমরা সব আনন্দে হাততালি দিয়ে রুমাল উড়িয়ে টুপি উড়িয়ে দু-হাত তুলে নাচছি—জয় রামবাবুকী জয়, জয় রামবাবুকী জয়! সে যা শোভা আমাদের তখন, যদি দেখতে হেসে বাঁচতে না। দুপুর রোদ্‌দুরে দু-হাত তুলে সবার নৃত্য। রবিকাকা ছিলেন না সেখানে, তিনি বোধহয় সে সময়ে অন্য কোথাও ছিলেন। যাক, আস্তে আস্তে

৮৫