এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে মার কাছে গল্প শুনি, এই রকম সব ব্যাপার হচ্ছে। অশ্রুমতী অভিনয় হল, বাড়ির মেয়েরা কেউ দেখতে পেলেন না। তখন পাবলিক স্টেজে গিয়ে মেয়েরা দেখবে, এ দস্তুর ছিল না। কী করা যায়। বাবামশায় বললেন, পুরো বেঙ্গল থিয়েটার এক রাতের জন্য ভাড়া নেওয়া হোক। কেবল আমাদের বাড়ির লোকজন থাকবে সেদিন। অ্যাক্‌টাররা ছাড়া বাইরের লোক আর-কেউ থাকবে না।

 সেই প্রথম মেয়েরা ছাড়া পেলে পাবলিক স্টেজে থিয়েটার দেখতে। ছয় বছরের শিশু আমার মতো, আর অনেক বুড়িদেরও সেই প্রথম থিয়েটার দেখা। অনেক টাকা খরচ করে এক দিনের জন্য স্টেজ ভাড়া করা হল; বেঞ্চিটেঞ্চি নয়, ও-সব সরিয়ে বাড়ির বৈঠকখানা থেকে আসবাবপত্র নিয়ে হল্‌ সাজানো হল। নীচে কার্পেট পেতে ইজি-চেয়ার, ফুলের মালা, আলবোলা; মেয়েদের জন্য চিকের ব্যবস্থা—ঠিক যেন আটচালা সাজানো হয়েছে। স্টেজের অডিটরিয়াম ঘর হয়ে গেল। ছোটোদিদিমা ত্রিপুরাসুন্দরী আছেন, বাড়ির ছেলেমেয়ে কেউ বাদ যাবে না, সবাই যাবে—আমরাও অনুমতি পেলুম থিয়েটার দেখবার। ঘর হয়ে গেছে, ঘরে বসে দেখব, আপত্তির কী আছে। সবাই গেছি, রামলাল চাকর আমাকে স্টেজের বাঁ দিকে প্রথম ‘রো’তে—‘রো’ বলে কিছু ছিল না, আমাদেরই চেয়ার দিয়ে সাজানো হয়েছিল ঘর—তবু রামলাল আমাকে স্টেজের সামনেই বসিয়ে দিলে, ছোটো ছেলে ভালো করে দেখতে পাব। কালীকেষ্ট ঠাকুরের দুই মেয়েও ছিলেন আমার পাশে। বড়ো হয়েও এই সেদিনও সেই থিয়েটার দেখার গল্প হত আমাদের; বলতেন, মনে আছে আমাদের থিয়েটার দেখা? আমি বলি, মনে নেই আবার—যা চিমটি কেটেছিলে পাশে বসে!

 বসে আছি, ড্রপসিন পড়ল, তাতে আঁকা ইউলিসিসের যুদ্ধযাত্রা। রাজপুত্তুর নৌকোতে চলেছে, জলদেবীদের সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে, পিছনে পাহাড়ের সার—গ্রীক-যুদ্ধের একটা কপি। কোনো সাহেবকে দিয়ে আঁকিয়েছিল বোধ হয়, প্রকাণ্ড সেই ছবি। নৌকো থেকে গোলাপ

৯৩