ফুলের মালা ঝুলছে, কী ভালো যে লাগছে, তন্ময় হয়ে দেখছি।
সিন উঠল। ভামশা মন্ত্রী ইয়া লম্বা দাড়ি, রাজপুত্তুর, দ্বন্দ্বযুদ্ধ, তলোয়ারের ঝক্মকানি, হাসিকান্না—ডুবে গেছি তাতে।
অভিনয় হচ্ছে, সঙ্গে সঙ্গে কথা মুখস্থ হয়ে যাচ্ছে। মলিনা সেজেছিল সুকুমারী দত্ত। স্টেজ-নাম ছিল গোলাপী, সে যা গাইত! বুড়ো বয়সেও শুনেছি তার গান, চমৎকার গাইতে পারত। মিষ্টি গলা ছিল তার, অমন বড়ো শোনা যায় না। আর কী অভিনয়, এক হাতে পিদিমটি ধরে শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢাকতে ঢাকতে আসছে, যেন ছবিটি—এখনো চোখে ভাসছে। পৃথ্বীরাজ আর মলিনার গান, এখনো কানে বাজছে সে সুর—
এ সুখ-বসন্তে সই কেন লো এমন
আপন-হারা বিবশা—
ঐটুকু ছেলের মন একেবারে তোলপাড় করে দিলে। ভীল সর্দার সেজেছিলেন অক্ষয় মজুমদার। ‘এ চেনী বুড়ি’ বলে যখন অশ্রুমতীর থুঁতি ধরে আদর করছে, তা ভুলবার নয়। আর ভীলদের মতো সেজে, মাথায় পালক গুঁজে তীরধনুক নিয়ে সে যা নাচলেন, আর গাইলেন—
ক্যায়্সে কাহারোয়া জাল বিনু রে,
জাল বিনু জাল বিনু জাল বিনু রে।
দিনকে মারে মছলি, রাতকো বিনু জাল,
আর অ্যায়্সা দেক্দারী কিয়া জিয়া কি জঞ্জাল।
এই বলে অক্ষয়বাবুর নৃত্য, এই নৃত্যতেই ছোটো ছেলের মন একেবারে জয় করে নিলেন। সেই থেকে আমি তাকে কমিক অভিনয়ে গুরু বলে মেনে নিলুম। আমি নিজে চিরকাল কমিক পার্টই নিতুম, অভিনয়ে তাই আমার ভালো লাগত। রবিকাকাও বেছে বেছে যাতে একটু কমিক ভাব আছে সেই-সব পার্ট আমাকে দিতেন। অ্যাক্টিং মনটায় সেই অক্ষয়বাবু ছায়াপাত করলেন। আমিও অভিনয় করবার সময় অক্ষয়বাবুর কথা স্মরণ করে তাঁর নকল করি।
৯৪