অশ্রুমতীও বেশ ভালো অভিনয় করেছিল। প্রতাপ সিংহের অভিনয়, বাদশার ছেলে সেলিমের অভিনয়, সব যেন সত্যিসত্যিই রূপ নিয়ে ফুটে উঠছে, অভিনয় বলে মনেই হচ্ছে না। অশ্রুমতীর অগ্নিপ্রবেশ, সেলিমকে বিদায় দিচ্ছে—
প্রেমের কথা আর বোলো না
আর বোলো না,
আর বোলো না, ক্ষমো গো ক্ষমো,
ছেড়েছি সব বাসনা।
ভালো থাকো, সুখে থাকো হে,
আমারে দেখা দিয়ো না, দেখা দিয়ো না।
নিবানো অনল জেলো না॥
হু হু করে আমার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। অশ্রুমতীর এই গানে সব মাত করে দিলে। এই গানটায় সুর দিয়েছিলেন জ্যোতিকাকা, ইটালিয়ান ঝিঁঝিট। রবিকাকাও কয়েকটা গানে তখন সুর দিয়েছিলেন বোধ হয়। বিলিতি সুরে বাংলা গান, এখন মজা লাগে ভাবতে। কোত্থেকে যে সুর সব জোগাড় করেওছিলেন। এই-সব স্তব্ধ হয়ে দেখছি, অন্য জগতে চলে গেছি। অশ্রুমতী নাটকে না ছিল কী! আর কী রোমাটিক সব ব্যাপার! মুখে কথাটি নেই, স্থির হয়ে দেখছি, হঠাৎ একটা জায়গায় খটকা লাগল।
অভিনয় প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, অশ্রুমতী বেশ ভালো অভিনয়ই করেছিল, কিন্তু ওমা, তার পায়ের দিকে চেয়ে দেখি বকলস-দেওয়া বার্নিশ-করা জুতো! অশ্রুমতী হল রাজপুত রমণী, তার পায়ে এ জুতো কী! তবে তো এ আসল নয়, ঐ একটুখানি সাজের খুঁতে এত যে ইলিউশন সব ভেঙে গেল।
এই প্রথম আমার স্টেজে দেখা নাটক। তারপর বাড়ি এসে আমরা ছেলেরা কয়েক দিন অবধি কেবলই অশ্রুমতীর নাটক করছি নীচের বড়ো ঘরটিতে। কথাগুলো সব ঐ এক দিনের দেখাতেই মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল।
৯৫